‘কম ঝুঁকিতে বেশি আয়ের আশায় টানা পার্টিতে’

একজন ছিলেন সিএনজি অটোরিকশার চালক, আরেকজন ডাকাত। কম ঝুঁকিতে বেশি আয়ের আশাতেই তারা যুক্ত হয়েছেন ছিনতাইয়ে।  

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2018, 02:22 PM
Updated : 26 Feb 2018, 02:27 PM

চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে আহত দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকেিএমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সোমবার ভোর রাতে নগরীর খুলশী থানার আমাবাগান পূবালী মাঠের কাছে গুলিবিদ্ধ ইউসুফ ওরফে ইলিয়াছ (৩৫) ও শেখ ফরিদকে (৩৪) গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, রাতে জুয়ার আসরে অভিযানে গেলে ছিনতাইকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।

পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে তাদের কয়েকজন পালিয়ে যায় আর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার হয় ইউসুফ ও শেখ ফরিদ।

গ্রেপ্তাররা গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাকির হোসেন রোডে চট্টগ্রামের এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির রাইটিং সেন্টারের পরিচালক ব্রিটিশ নাগরিক জুলিয়া ডেভিসের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনতাই করেছিল বলে পুলিশ জানায়।

গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে কদমতলী এলাকায় শেখ ফরিদের বাসা থেকে পুলিশ জুলিয়া ডেভিসের ব্যাগে থাকা ক্যামেরাটি উদ্ধার করে।  

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মো. শহীদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা পেশাদার ছিনতাইকারী। নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে তারা ছিনতাই করে।

ফরিদের বিরুদ্ধে চারটি ও ইউসুফের বিরুদ্ধে আটটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আর কোনো মামলা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার ইউসুফ ছিলেন পেশাদার ডাকাত। ২০০৫ সালে ডাকাতির মামলায় কারাগারে গিয়ে সেখানে ছিনতাইকারী হামকা নূর আলমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে হামকা নূর আলমের সঙ্গে মিলে ২০১০ সালে নগরীতে ছিনতাই শুরু করে।

হামকা নূর আলমের নেতৃত্বে তারা লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বা গুলি করে টাকপয়সা ছিনিয়ে নিত।

“ছিনতাই মামলায় কয়েকবার কারাগারে গিয়ে ইউসুফের পরিচয় হয় ‘টানা পার্টির’ সদস্য ইমন, নজরুল, ভুট্টো ও জাকিরের সাথে। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ২০১৬ সাল থেকে ছিনতাইয়ের কাজ বাদ দিয়ে টানা পর্টির সাথে জড়িয়ে পড়ে ইউসুফ।”

কামরুজ্জামান জানান, নগরীতে যে কয়েকটি দল অটোরিকশা নিয়ে ছিনতাই করে তার মধ্যে এ দলটি বেশি সক্রিয়। গ্রেপ্তার ইউসুফ, ফরিদ ছাড়াও দলটিতে আরও বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছে।

শেখ ফরিদ সিএনজি অটোরিকশার চালক ছিলেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালে ‘টানা পার্টির’ কিছু সদস্যের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে সে চক্রটির সঙ্গে জড়িয়ে যায়।

গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, “২০১০ সাল থেকে শেখ ফরিদ টানা পার্টির সঙ্গে জড়িত হলেও প্রথম গ্রেপ্তার হয়েছিল গত বছরের ১৪ অগাস্ট। একটি ছিনতাইয়ের মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে।

“দলের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়ায় ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর শেখ ফরিদ দুবাই চলে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে সুবিধা করতে না পারায় ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দেশে চলে আসেন। এরপর আবার টানা পার্টির সঙ্গে জড়িত হন।”

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউসুফ আগে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে জড়িত থাকায় বেশ সাহসী। বিভিন্ন অভিযানে তিনি যাত্রীদের ব্যাগ টান দেন।

ফরিদ এবং ইউসুফ দুইজনই সিএনজি অটো রিকশা চালানোয় দক্ষ। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ নাগরিকের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনতাইয়ের সময় শেখ ফরিদ অটোরিকশাটি চালিয়েছিলেন বলে জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ুন কবির। 

পুলিশের ভাষ্য, এই দলটি নগরীর সিটি গেইট থেকে বড়পুল ও জিইসি থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় সড়কে মূলত সকালে ও সন্ধ্যার পর ছিনতাইয় করে।

সকালে বাস-ট্রেনের যাত্রী ও সন্ধ্যার পর মার্কেট থেকে আসা নারীরাই তাদের লক্ষ্য। প্রতিদিন অন্তত আট থেকে ১০টি ছিনতাই করে তারা।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশাগুলো তারা মূলত মালিকদের কাছ থেকে মাসিকভিত্তিতে ভাড়া নেয়। সারাদিন অটোরিকশাগুলো ভাড়ায় না চালিয়ে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করে।

এছাড়া নগরীর কয়েকজন ছিনতাইকারীর নিজস্ব অটোরিকশা আছে বলেও পুলিশের কাছে তথ্য আছে। দ্রুতগতিতে চলাচলের জন্য ছিনতাইকারীরা সিএনজির পরিবর্তে অটোরিকশাগুলো অকটেন দিয়ে চালায় বলেও জানায় পুলিশ।

গত বছর ১৪ অগাস্ট পিবিআই ইউসুফের সাথে শেখ ফরিদকেও গ্রেপ্তার করেছিল। তবে মাস কয়েকপর তারা জামিনে ছাড়া পায়।

পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, ইউসুফ জমি বিক্রি করে নিজে একটি সিএনজি অটো রিকশা কেনেন, যেটি ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়।