প্রথমবার দেওয়া থানা পুলিশের অভিযোগপত্রের মতো এই অভিযোগপত্রেও আসামি করা হয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।
আসামির সংখ্যা দুজন বেড়েছে, পরিবর্তন হয়েছে ক্রমেও; তবে কমেছে সাক্ষীর সংখ্যাও।
তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দেওয়া অভিযোগপত্র বৃহস্পতিবার মহানগর হাকিম আবু সালেহ মো. নোমানের আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগপত্রটি আদালতে উপস্থাপন করেছি।”
তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অভিযোগপত্রে ৬৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাক্ষী করা হয়েছে ১৭ জনকে।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর থানা পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে ৬২ জনকে আসামি এবং ৩৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল।
এর দুদিন পরই তৎকালীন মহানগর হাকিম নওরিন আক্তার কাঁকন অভিযোগপত্রটি গ্রহণ না করে ‘অধিক গুরুত্বে সঙ্গে’ তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
পিবিআইর অভিযোগপত্রেও আসামি করা হয়েছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর এবং ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা সাইফুল ইসলাম লিমনকে।
আসামির তালিকায় আছেন যুবলীগ কর্মী অজিত বিশ্বাস এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু।
পিবিআই কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বলেন, নতুন যে দুজনকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন অমিত চক্রবর্তী শশী ও মো. টিপু।
“অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে অজিত বিশ্বাসকে। দ্বিতীয় আসামি সাইফুল ইসলাম লিমন।”
অজিত যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী এবং বাবরের বিরোধী দলটির নেতৃত্বে আছেন লিমন।
২০১৩ সালের ২৪ জুন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি এলাকায় ৪৮ লাখ টাকা মূল্যের রেলের দরপত্র নিয়ে বাবর ও লিমন পক্ষের বিরোধের জেরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাজু পালিত (২৪) ও স্থানীয় সিআরবি বস্তির শিশু আরমান (৮)। এদের মধ্যে সাজু পালিত ছিলেন বাবরের অনুসারী।
‘অজিতের গুলিতে দুজনের মৃত্যু’
তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অজিত বিশ্বাসের গুলিতেই সেদিন দুজনের মৃত্যু হয়েছিল।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আগের বিভিন্ন দরপত্রের ভাগের টাকা পাওনা থাকায় সাজু পালিত ও অজিত বিশ্বাসের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
“ঘটনার দিন সিআরবি সাত রাস্তার মাথায় একটি টং দোকানে পুরি খাচ্ছিল সাজু। পাওনা টাকার জন্য সেখানে উপস্থিত অজিত বিশ্বাসকে গালাগালি করে সাজু। এসময় অজিত কোমরে থাকা অবৈধ পিস্তল বের করে সাজুর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে।”
তখন লিমনের অনুসারীরা এগিয়ে অজিত এলোপাতাড়ি গুলি চালালে আরমান নিহত হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার দিন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) নেজামউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, দরপ্রস্তাব জমা নিয়ে দুই পক্ষের তর্কাতর্কি ও ধাওয়ার এক পর্যায়ে গোলাগুলি শুরু হয়। এসময় উভয় পক্ষ ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
পিবিআইর অভিযোগপত্রে দুই পক্ষের তর্কাতর্কি এবং গোলাগুলির কোনো উল্লেখ নেই।
ঘটনার পর এসআই মহিবুর রহমান বাদী হয়ে ৮৭ জনের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন তাতে ৭৮ নম্বরে ছিল অজিতের নাম।
ঘটনার এক মাস পরে যুবলীগকর্মী সাজু পালিতের মা মিনতি পালিত বাদী হয়ে অজিতকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করেন।
জোড়া খুনের বিষয়ে পুলিশ ও সাজু পালিতের মায়ের করা মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
দুই দফা তদন্ত কর্মকর্তা বদলের পর ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর প্রথম অভিযোগপত্র জমা পড়েছিল।
টিপু-বাবরের উপস্থিতির ‘প্রমাণ মেলেনি’
পুলিশের দেওয়া প্রথম অভিযোগপত্রে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের নাম ছিল ৩৪ নম্বরে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা আলমগীর টিপুর নাম ছিল ৭ নম্বরে।
বৃহস্পতিবার পিবিআইয়ের দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রে আলমগীর টিপুর স্থান ৪৯ নম্বরে এবং বাবরের স্থান ৬৩ নম্বরে।
অভিযোপত্রে বলা হয়, তদন্তকালে ৪৯ থেকে ৬৪ ক্রমিকের আসামিদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এবং হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণের সমর্থনে কোনো বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ঘটনার দিন সিআরবির অদূরে মেলা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে লিমনের অনুসারী টিপুসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিলেন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম।
পিবিআইর অভিযোগপত্রে বলা হয়, “তদন্তে জানা যায়, আলগমীর টিপু তার বন্ধুদেরসহ আদালত থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাসে উঠার জন্য পায়ে হেঁটে টাইগার পাস যাচ্ছিল। কদমতলী মোড়ে আসার সাথে সাথে পুলিশের মোবাইল টিম তাদের গ্রেপ্তার করে।”
এ মামলায় বাবর, লিমন, টিপু, অজিতসহ বেশ কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার হলেও এখন তারা জামিনে আছেন।