শাহ আমানতে ধাপে ধাপে অনিয়ম: টিআইবি

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েক ধাপে অনিয়মের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2018, 02:05 PM
Updated : 15 Feb 2018, 02:12 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম: যাত্রীসেবা কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শিরোনামে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সনাক-টিআইবি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, “গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তদারকি ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে বিমানবন্দরে প্রবেশ থেকে শুরু করে বোর্ডিং লাউঞ্জ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো না কোনো ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করা হয়।

“এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় আনসার সদস্যের দ্বারা যাত্রী হয়রানির মাধ্যমে অর্থ আদায়, মালপত্র লুকিয়ে বকশিশ আদায়, পার্কিং এলাকায় মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের দৌরাত্ম্যের কারণে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া আদায়।”

এছাড়া ধাতব বস্তু কেবিন ব্যাগে বহন নিষিদ্ধ হলেও সিভিল এভিয়েশনের কিছু কর্মী অর্থের বিনিময়ে এ সুযোগ দেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

আখতার কবির বলেন, প্রবাসে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত যাত্রীদের বহির্গমন কার্ড পূরণের কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিভিল এভিয়েশন, ইমিগ্রেশন এবং বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মীদের একাংশ ‘অর্থের বিনিময়ে’ এই কার্ড পূরণ করে দেয়।

“মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যে সব যাত্রী ভিজিট ভিসা নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন তাদের নিয়মবহির্ভূত অর্থের বিনিময়ে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা করে ইমিগ্রেশন কর্মীরা। এই অর্থের পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।”

আইনজীবী আখতার কবির চৌধুরী বলেন, কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও হয়রানি, ভিসার মেয়াদ কম-ছবি ঠিক নেই এসব অজুহাতে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

“এছাড়া যাত্রীর সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত মুদ্রা রেখে দেওয়া, অর্থের বিনিময়ে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি ও আমাদানিযোগ্য পণ্যের শুল্ক ফাঁকি এবং বকশিশের বিনিময়ে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড শাখা থেকে পাসপোর্ট ছাড়াই পণ্য ছাড়ের অভিযোগ জানা গেছে গবেষণায়।”

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে ‘চিটাগাং এয়ারপোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’র আওতায় যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয় তাতে ছয় লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে একই অবকাঠামোয় সাড়ে ১২ লাখের বেশি যাত্রীকে সেবা দিতে হয়। যাত্রী ও ফ্লাইট সংখ্যা বাড়লেও ১৯৮৮ সালের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী লোকবল দিয়ে চলছে এই বিমানবন্দর।

বিমানবন্দরের যন্ত্রপাতির মধ্যে ৩৭ শতাংশ আংশিক ব্যবহার উপযোগী এবং ২৪ শতাংশ যন্ত্র ব্যবহার উপযোগী নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

শাহ আমানতে যাত্রী সেবার মান বাড়াতে ১৩ দফা সুপারিশও উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাফর সাদেক চৌধুরী।

সুপারিশের মধ্যে আছে অবকাঠামো উন্নয়ন, লোকবল বৃদ্ধি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচকের বকেয়া টাকা আদায়, নতুন বোর্ডিং ব্রিজ ক্রয়, চেক ইন কাউন্টার বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত ইমিগ্রেশন বুথ চালু করা এবং নিরাপত্তা তল্লাশি, ইমিগ্রেশন ও শুল্কসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সনাক সহ-সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া, টিআইবির সাধারণ পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ও সনাক সদস্য রওশন আরা চৌধুরী।

২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে গবেষণাটি চালানো হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।