শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের র্যাডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে নেপালি ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
নেপালি রাষ্ট্রদূত বলেন, “বিদ্যুৎ খাতে নেপালের বড় সম্ভাবনা আছে। একশ হাজার মেগাওয়াটের মেগা ড্যাম প্রজেক্ট করার সুবিধা আমরা দিতে পারি।
“সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আপনারা (বাংলাদেশ) কয়লা ব্যবহার করছেন। এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই আপনারা নেপাল থেকে ‘গ্রিন এনার্জি’ লাভের সুবিধা নিতে পারেন।”
হিমালয়ের পাদদেশের দেশ নেপালে যৌথ বিনিয়োগে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা নিয়ে কয়েক বছর আগে দুই দেশের কথা-বার্তাও হয়েছিল, তবে তা এগোয়নি।
অনুষ্ঠানে নেপালের উপ রাষ্ট্রদূত ধন বাহাদুর ওলি বলেন, “জ্বালানির সবচেয়ে সস্তা উৎস জলবিদ্যুৎ। কেন আমরা এখনো শুধু আলোচনাই করছি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”
এই সফরে নেপালি ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর এবং কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করবেন।
চোপ লাল ভুসাল বলেন, “১৯৭৬ সালে আমাদের মধ্যে (বাংলাদেশ ও নেপাল) ট্রেড ও ট্রানজিট সুবিধা ছিল। সেটা ১৯৮২ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমরা চাই ট্রানজিট সুবিধা পুনরায় চালু করতে।
“নেপাল বিভিন্ন ধরনের মসলা উৎপাদন করে আর বাংলাদেশ প্রচুর ওষুধ উৎপাদন করে। আপনাদের ওষুধের অনেক বড় কারখানা আছে। তৃতীয় দেশ থেকে ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করেন। এটা আপনারা নেপাল থেকেও করতে পারেন।”
মসলার পাশাপাশি মসুর ডাল ও গমও বাংলাদেশ আমদানি করতে পারে বলে জানান তিনি।
বাংলাবান্ধা বন্দর হয়ে সড়ক পথেও পণ্য পরিবহনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন নেপালি রাষ্ট্রদূত।
দুই পক্ষে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধতার কথা তুলে মাঝখানের দেশ ভারতের সঙ্গে আলোচনার কথাও বলেন চোপ লাল ভুসাল।
পাশাপাশি বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের জোট) এবং বিমসটেক (বাংলাদেশ, ভারাত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটানের জোট) এর কার্যক্রম আরও জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
উপ রাষ্ট্রদূত ধন বাহাদুর ওলি বিবিআইএন এর দৃষ্টান্ত টেনে তিনি বলেন, যোগাযোগ ও জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানো খুবই জরুরি। মূল বিষয় হওয়া উচিৎ কীভাবে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়।
“চট্টগ্রাম হতে পারে নেপালের পণ্য বিশ্বের অন্যস্থানে রপ্তানির কেন্দ্রস্থল।”
ট্রেড সার্ভিস ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চাৎভূমি (হিন্টার ল্যান্ড) শুধু বাংলাদেশ নয়, উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল ও ভুটানও।
“আশির দশক থেকে নেপাল পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করছে কারণ তাদের ছিল ব্রড গেজ সুবিধা। আমাদের ছিল মিটার গেজ। পরে ব্রড গেজ হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে নেপালের আমদানি-রপ্তানি শুরুও হয়েছিল।”
তিনি বলেন, ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা আছে। গত তিন দশক ধরে এ নিয়ে কথা বলছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, নেপালের ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী। বন্দর, জ্বালানি ও পর্যটন খাত হতে পারে দুই দেশের বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর প্রধান উৎস।