ফাঁসি দিবসে মাস্টারদা সূর্য সেনকে স্মরণ

চট্টগ্রামে নানা আয়োজনে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ মাস্টারদা সূর্য সেনের ৮৫তম ফাঁসি দিবস পালিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2018, 02:50 PM
Updated : 12 Jan 2018, 02:50 PM

শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক ফাঁসির মঞ্চের পাশে মাস্টারদার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী ও কারাগারের কর্মকর্তারা।

এছাড়া নগরীর জে এম সেন হলে সূর্য সেনের আবক্ষ মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, সূর্য সেন স্মৃতি পাঠাগার, চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।

রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ায় সূর্য সেনের আবক্ষ মূর্তিতে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। 

জে এম সেন হল প্রাঙ্গনে সিপিবি আয়োজিত আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা বলেন, মাস্টারদা সূর্য সেনের সেই সংগ্রামী ও আত্মত্যাগের আদর্শিক পথ ধরে ১৯৭১ সালে বাঙালির কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

“মাস্টারদার দেখানো পথে বিপ্লবী তৎপরতায় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ পরাজিত হয়েছে।পাকিস্তানি শাসকদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে এদেশের মুক্তিকামী জনগন। কিন্তু আমাদের কাংখিত সেই গণতান্ত্রিক ও শোষণ বৈষম্যহীন রাষ্ট্র আজো আমরা পাইনি।”

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ফরিদুল আলম, প্রীতম সাহা, রবিউল হোসেন, অমিতাভ সেন প্রমুখ।

এদিকে ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা শাখা সংগঠনের কার্যালয়ে আরেকটি আলোচনা সভার আয়োজন করে।

এতে অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার বলেন, আজো আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে বাক স্বাধীনতার জন্য, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য, গণতান্ত্রিক ও শোষণ বৈষম্যহীন সমাজের জন্য। মানবিক পৃথিবী বিনির্মানের লড়াইয়ে মাস্টারদা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

ওই সভায় বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল ও কেন্দ্রীয় সদস্য অটল ভৌমিক, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আতিক রিয়াদ।

এতদিনেও সূর্য সেনের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বিপ্লব ও বিপ্লবী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ।

পরিষদের সংগঠক প্রীতম দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ মাস্টারদার নামে চট্টগ্রামে কোনো সড়ক নেই। নেই কোনো স্মৃতি জাদুঘর।

“এমনকি জালালাবাদ পাহাড়ে কোনো স্মৃতি স্তম্ভ নেই। বীর শহীদদের স্মরণে নগরীতে কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হয়নি। অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের স্মৃতি বিজড়িত স্থানে একটি স্মৃতি স্মারক নির্মাণের উদ্যোগ কয়েক বছর আগে নেয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।”

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের কর্মকান্ড পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানান প্রীতম দাশ।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দেন মাস্টারদা সূর্য সেন। ভারতীয় প্রজাতান্ত্রিক বাহিনী, চট্টগ্রাম শাখা গঠন করে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের।

তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমন, জালালাবাদ যুদ্ধ হয়।

১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ইংরেজ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সূর্য সেন ও বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।