ঘটনার পাঁচ দিন পর একজন প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ওই মামলা নেয় পুলিশ।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার এ ঘটনায় ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় নয় বলে ভুক্তভোগীদের পটিয়া থানায় পাঠিয়েছিল কর্ণফুলী থানা পুলিশ। সেখানে একই কথা বলে আবার তাদের পাঠানো হয় কর্ণফুলী থানায়।
সেখানে দ্বিতীয় দফায় গিয়েও কাজ না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিল ওই পরিবার।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বাড়িতে গিয়ে ঘটনা বলার পর তার হস্তক্ষেপে পাঁচ দিন পর মামলা হয় বলে জানিয়েছেন ধর্ষিতদের এক স্বজন।
তবে এজন্য ওই পরিবারের উপর দায় চাপিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ঘটনাস্থলের নাম ‘ভুল’ করায় মামলা নিতে দেরি হয়।
এত বড় ঘটনার পাঁচ দিনেও দুই থানা মিলে কেন ঘটনাস্থল নিয়ে প্রশ্নের সুরাহা করতে পারেনি, সেই জবাব মেলেনি তাদের কাছে।
গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) গভীর রাতে কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নের ওই বাড়িতে ধর্ষিতদের মধ্যে তিনজন প্রবাসী তিন ভাইয়ের স্ত্রী, অন্যজন তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা ননদ।
এই পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে তিনজন মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী। তিন ভাইয়ের স্ত্রী তাদের শাশুড়ি ও দুই সন্তান নিয়ে এই বাড়িতে থাকতেন। ধর্ষিতা গৃহবধূদের একজন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
ঘটনার একদিন পর বৃহস্পতিবার ধর্ষিতরা কর্ণফুলী থানায় মামলা করতে গেলে ঠিকানা জটিলতার কথা বলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে জানান দেশে থাকা ওই পরিবারের ছোটভাই।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অভিযোগ নিয়ে থানায় যাই। পুলিশকে আমাদের বাড়ির ঠিকানা … বলায় তারা ঘটনাস্থল পটিয়া থানার মধ্যে জানায় এবং সেখানে মামলা করতে বলে।
“পরবর্তীতে আমাদের আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলি এবং পুনরায় কর্ণফুলী থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে মামলা করতে যাই। কিন্তু থানায় পুলিশ মামলাটি এন্ট্রি করে নাই।
“শনিবার আমরা আবার থানায় গেলে পরে তারা তদন্তে যাবে বলে আমাদের জানায়। সেখান থেকে বড়উঠান ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নিয়ে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে যোগাযোগ করি এবং তার নির্দেশে থানা এটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে।”
রোববার রাতে বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন এই তরুণ।
তিনি বলেন, “মন্ত্রীর ফোনের পর পুলিশের তদন্ত টিম আমাদের বাড়িতে আসে। কিন্তু তার আগে তিন দিন ধরে পুলিশের কাছে ধরনা দিলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি।”
ওই পরিবারকে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,ওই বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য থাকতেন না।
“১২ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে কয়েকজন যুবক জানালার গ্রিল কেটে বাড়িতে প্রবেশ করে বৃদ্ধা মা ও দুই শিশুকে ছুরি ও অস্ত্র ধরে জিম্মি করে চার মহিলাকে বিভিন্ন রুমে নিয়ে ধর্ষণ করে।”
পুলিশের ঠেলাঠেলিতে ভুক্তভোগীরা মামলা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি তাদের ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের কাছে নিয়ে যাই এবং মন্ত্রীর নির্দেশে কর্ণফুলী থানা মামলা গ্রহণ করে।”
মামলা নিতে গড়িমসির কারণ জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ওসি সৈয়দুল মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার পর প্রথম থানায় এসে তারা তাদের যে ঠিকানা বলেছিল, তা পটিয়া এলাকায় হওয়ার কারণে তাদের পটিয়া থানায় যেতে বলি। তাছাড়া তারা শুরুতে এটিকে ডাকাতির ঘটনা বলে ধর্ষণের বিষয়টি খোলাসা করেনি।”
এই ঘটনায় কাউকে রক্ষা বা কাউকে হয়রানির কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই দাবি করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “গত শনিবার বিজয় দিবসের রাতে তারা থানায় আসলে পরদিন তাদের আসতে বলা হয়েছিল।”
পটিয়া থানার ওসি শেখ নেয়ামত উল্লাহ বলছেন, ধর্ষিতাদের পরিবারের কোনো সদস্য অভিযোগ নিয়ে তার থানায় যায়নি।
কর্ণফুলী থানায় মামলা নেওয়ার পর একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ওই থানার ওসি মোস্তফা বলেন, “আরও বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।”
সোমবার রাতে মো. সুজন ওরফে আবু (২৩) নামে একজনকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। তাকে টিআই প্যারেড (শনাক্তকরণ) করানোর জন্য আবেদন হলেও রিমান্ড আবেদন করেনি পুলিশ।
সোমবার ওই চার নারীর মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে।
এই ঘটনায় মামলা নিতে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে নগর পুলিশের কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা তাদের বাড়ি … গ্রাম বলেছিল। ঠিকানা বলতে ভুল করায় মামলা গ্রহণে দেরি হয়েছে।
“আমরা ঘটনার জোর তদন্ত করছি এবং ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। দ্রুতই এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।”