কুলখানিতে যেভাবে ঘটল পদদলনের ঘটনা

ধারণার চেয়ে বেশি ভিড় আর অধৈর্য্য মানুষের হুড়োহুড়িতেই চট্টগ্রামে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে পদদলনের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীও উত্তম সেনগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2017, 02:39 PM
Updated : 18 Dec 2017, 05:33 PM

সোমবার বেলা দেড়টার দিকে বন্দরনগরীর জামালখান আসকার দীঘির পাড়ে রীমা কমিউনিটি সেন্টারে এ ঘটনায় দশ জনের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও অন্তত দশজন।

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানি উপলক্ষে নগরীর ১৩টি কমিউনিটি সেন্টার এবং সাবেক মেয়রের চশমা হিলের বাসায় দোয়া মাহফিল ও মেজবানের আয়োজন করা হয় এদিন। এর মধ্যে রীমা কমিউনিটি সেন্টারের আয়োজন ছিল মূলত হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের জন্য।

জামালখানের এস এস খালেদ সড়ক সংলগ্ন দুই তলা ওই কমিউনিটি সেন্টার ভবনের নিচতলা ব্যবহার করা হয় মূলত গাড়ি রাখার জন্য। আর বসা ও খাওয়ার ব্যবস্থা দোতলায়।

আসকার দীঘির পাড় কিছুটা নিচু এলাকা হওয়ায় ওই সড়কের অধিকাংশ ভবনের মত রীমা কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথও বেশ খানিকটা ঢালু। ভবনের দুটি ফটকের মধ্যে পশ্চিম পাশের প্রথম ফটকটি থেকে মূল ভবন প্রায় ১০ ফুট নিচে।

মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পর ওই ঢালু অংশ পার হয়ে মূল ভবনে যেতে হয়। সেখানেই ভিড়ের মধ্যে পদদলনের ঘটনা ঘটে। 

 

এ আয়োজনে রীমা কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন আন্দরকিল্লার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এই সেন্টারে ১০ হাজার মানুষের মেজবানের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও মানুষ বেশি হতে পারে ভেবে তারা ১৩ হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন করেছিলেন।

“দুপুরে খাবার পরিবেশন শুরু হওয়ার পর তিনটি ব্যাচের খাওয়া শেষ হয়। একটি ব্যাচের খাওয়া তখন চলছিল। এরপর বসার জন্য অনেকে বাইরে অপেক্ষা করছিল।”

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জহরলাল হাজারী বলেন, “প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে এক সময় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে লোকজন গেইট খুলে ঢুকতে শুরু করে। বিনা কারণে অধৈর্য্য হয়ে আগে ঢুকতে চাওয়ার জন্যই অত্যন্ত দুঃখজনক এ ঘটনা ঘটল।”

মেজবানে অংশ নিতে আসা অনুপ দাশ নামে একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফটকের বাইরে তখন অনেক মানুষের ভিড়। পেছনের চাপে সামনে ওই ঢালু জায়গায় থাকা বেশ কয়েকজন পড়ে যান। তখন তাদের ওপর দিয়েই পেছনের লোকজন হুড়মুড় করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে।

একই রকম বিবরণ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসাইনের কথায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, মূল ফটকটি প্রবেশের জন্য নির্ধারিত ছিল। আর অন্য ফটক দিয়ে খাওয়ার পর লোকজন বের হচ্ছিল।

“মূল ফটকে লোকজন ঢুকে পড়ার পর পেছনের লোকজনও আগে যাওয়ার চেষ্টায় এগোতে শুরু করে। সেই ধাক্কাধাক্কির মধ্যে সামনে যারা ছিলেন, তারা ঢালু অংশে পড়ে যায়। পেছনের লোকজন তাদের মাড়িয়েই ভেতরে ঢুকে পড়ে।”

মোস্তাইন হোসাইন জানান, রীমা কমিউনিটি সেন্টারে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ২০ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।

কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে এত লোক হুড়মুড়িয়ে ফটক দিয়ে ঢোকা শুরু করে যে পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি বলে সেখানে দায়িত্বে থাকা একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান।

আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানান, রীমা কমিউনিটি সেন্টার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের জন্য নির্ধারিত থাকলেও অন্য ধর্মের লোকজনও সেখানে খেতে এসেছিল।

নগরীর বাণিজ্যকেন্দ্র চাক্তাইয়ে ব্রোকারের কাজ করা মো. হারুন ওই কমিউনিটি সেন্টারে মেজবান খেতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে আহত হন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যাওয়ার-আসার পথেই রীমা। তাই সেখানে খেতে গিয়েছিলাম।”

কমিউনিটি সেন্টারের মূল ফটকে হুড়োহুড়ি থামাতে পুলিশকে মৃদু লাঠিপেটাও করতে হয়। পরে স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় টেম্পো ও অন্যান্য যানবাহনে করে হতাহতদের নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর বেলা আড়াইটার দিকেও রীমা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে কয়েকশ মানুষের ভিড় দেখা যায়। তখনও তারা কমিউনিটি সেন্টারে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল পুলিশকে।

হতাহতদের মধ্যে রীমা কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা ছাড়াও দূর থেকে আসা লোকজনও রয়েছেন।

প্রায় ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন চৌধুরী স্থানীয়ভাবে ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। তার কুলখানিতে ১৩টি কমিউনিটি সেন্টারে ‘লাখো মানুষের জন্য’ মেজবানের এই আয়োজন নিয়ে গত দুই দিন ধরে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রচারিত হওয়ায় মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন।