চট্টগ্রামবাসীর মুখে মহিউদ্দিন বন্দনা

আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকলেও চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, আন্দোলনে নেমেছেন বন্দরের উন্নয়নে, নগরবাসীর স্বার্থের প্রশ্নে রাজপথে নেমেছেন দলের নেতার বিরুদ্ধে- সেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত চট্টগ্রামের সব দল-মত, শ্রেণি-পেশার মানুষ।   

মিন্টু চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2017, 03:49 PM
Updated : 15 Dec 2017, 04:01 PM

শুক্রবার ভোররাতে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে এই নেতার মৃত্যুর পর দিনভর নগরীর বিভিন্ন এলাকা, পাড়া-মহলা, জটলা ও আড্ডায় আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

ষাটের দশকের এই ছাত্রনেতার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালোবাসা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং সাধারণ মানুষের প্রতি তার ভালোবাসার কথা ফিরছিল তাদের মুখে মুখে।

কেউ বলছিলেন ‘এমন নেতা আর আসবেন না’; কেউ কেউ বলছিলেন, চট্টগ্রামের অধিকার নিয়ে মহিউদ্দিনের মতো আর কাউকে সেভাবে আন্দোলনের ডাক দিতে দেখা যাবে না।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক বিহ্বল হয়ে পড়েন অনেকে। ছবি: সুমন বাবু

সকালে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে সিএনজি অটোরিকশা চালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, “তিনি (মহিউদ্দিন চৌধুরী) সবার নেতা ছিলেন, ধনী-গরিব সকলের সাথেই একভাবে মিশতেন। তিনি চালক-শ্রমিকদের কথা ভাবতেন বেশি।

“তার মতো আর কোনো নেতা পাওয়া যাবে না,” আফসোস ঝরে তার কষ্ঠে।

নগরীতে দুই দশক ধরে রিকশা চালান রংপুরের হাসান আলী। সকালে আন্দরকিল্লা মোড়ে দাঁড়িয়ে কণ্ঠে বিস্ময় নিয়ে তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী নাকি মারা গেছেন!

সস্মতি জানাতেই বললেন, “খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার মতো লোক হয় না।”

মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কেন পছন্দ করেন জানতে চাইলে এই রিকশাচালক বলেন, “উনাকে কেন জানি আপন আপন লাগে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির প্রতিবাদে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসভায় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী; (ফাইল ছবি)

এই ভালোবাসার টানেই প্রিয় মহিউদ্দিনকে শেষবারের মতো দেখতে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপশি হাজার হাজার সাধারণ মানুষ দুপুরে ভিড় করে নগরীর চশমা হিলে মহিউদ্দিনের বাসভবন এবং বিকালে নগরীর লালদীঘি মাঠে তার জানাজায়। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা জানাজায় অংশ না নিলেও তারা শামিল হয়েছিলেন শ্রদ্ধা নিবেদনের কাতারে।      

নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে বিকালে মহিউদ্দিনের জানাজায় এসেছিলেন বিএনপিকর্মী জহিরুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ রকম নেতা আর আসবে না। তিনি আওয়ামী লীগ করলেও তার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থেকেই জানাজায় এসেছি। কে কোন দল করত তা না দেখে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়াতেন।”   

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মরদেহ দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের বাসা থেকে দলীয় কার্যালয়ে নেওয়ার সময় তার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে চলে জনতার মিছিল। ছবি: সুমন বাবু

নগরীর আসকারদীঘি এলাকা থেকে জানাজায় এসেছিলেন ৬৭ বছর বয়সী মাহবুবুর রহমান। তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগ না করলেও পছন্দ করতেন দলটির এই নেতাকে।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো মানুষ হয় না মন্তব্য করে মাহবুবুর বলেন, “চট্টগ্রামের জন্য কাজ তাকে এত দূর এনেছে। তার অন্তর অনেক বড়। সবার উপর তিনি মানুষকে ঠাঁই দিয়েছিলেন। সে কারণে তিনি মানুষের হৃদয়ে সারাজীবন থাকবেন।”

ফেইসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মানুষ।প্রয়াত নেতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তার সামজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন অনেকে।