মহিউদ্দিনের জন্য ‘কেঁদেছেন’ প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কান্নায় ভেঙে পড়েন’ বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2017, 01:51 PM
Updated : 15 Dec 2017, 04:19 PM

শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর চশমা হিলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের।

ওই বাসা থেকে বেরোনোর পথে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তাকে আমরা আর কোনোদিনই ফিরে পাব না। চট্টগ্রামকে তিনি কান্নার নদীতে ভাসিয়ে যাচ্ছেন। শোক শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারা দেশেই শোকের ছায়া।

“ঢাকাতেও মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য অনেক মানুষ কাঁদছে (এসময় কেঁদে ফেলেন ওবায়দুল কাদের)। অনেক মানুষ শোক করছেন। আমাদের নেত্রীও (শেখ হাসিনা) আজ ভোর বেলায় কান্নায় ভেঙে পড়েন।”

এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী

ষাটের দশকে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য। প্রায় এক যুগ চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি। এরমধ্যে তিন মেয়াদে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন মহিউদ্দিন।

সাড়ে পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের শীর্ষ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরী

শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি তাতে রাজি হননি বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

“আমাদের নেত্রী তাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হতেও বলেছিলেন। তিনি রাজি হননি। তিনি বলতেন, আমার স্বপ্ন, আমার ধ্যান, আমার সব কিছুই হচ্ছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের বাইরে নেতা হওয়ার আমার কোনো স্বপ্ন নেই।”

চট্টগ্রামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষা আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিলেন মহিউদ্দিন। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন সম্প্রতি গৃহকর বাড়ানোর ঘোষণা দিলে তার বিরোধিতায় আন্দোলনে নামেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পৌরকর সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরী

চট্টগ্রামবাসীর উন্নয়নে মহিউদ্দিনের ভূমিকার প্রশংসা করে গত ১৩ মার্চ এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “আমরা বিরোধী দলে থাকা সত্ত্বেও মহিউদ্দিন চৌধুরী তখন নির্বাচনে জিতেছিল। চট্টগ্রামের রাস্তাঘাটসহ যত উন্নয়ন সেগুলো হয়েছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলেই, সেটা বাস্তব কথা।”

বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেখতে না পেলে ‘মহিউদ্দিন ভাই কোথায়?’ বলে তার খোঁজ করতেন শেখ হাসিনা।

দলীয় সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরী (ফাইল ছবি)

দলীয় ফোরামে বিভিন্ন সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি আস্থা ও ভালোবাসার কথা বলতেন তিনি।

২০১০ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হারের পর মহিউদ্দিন চৌধুরীকে একাধিকবার মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছিল।

মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিলেও তাতে রাজি হননি বলে তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন মহিউদ্দিন।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর নেতাকর্মীরা ভিড় করেন তার বাসায়

এখন মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বপ্ন পূরণে চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেন ওবায়দুল কাদের।

“তিনি আমাদের মাঝে নেই। এখন আমাদের যা করণীয়, তার স্বপ্নকে পূরণ করতে হবে, জলাবদ্ধতামুক্ত ক্লিন, গ্রিন ও আধুনিক চট্টগ্রাম। যেদিন তা হবে সেদিনই মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বপ্ন সফল হবে।”