মন্ত্রীর সাথে দেখা করেও চাকরি হয়নি, অভিযোগ অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের

নৌমন্ত্রীর সাথে দেখা করার পরও চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দার সন্তানদের একজনেরও লস্কর পদে চাকরি হয়নি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2017, 01:09 PM
Updated : 22 Nov 2017, 01:16 PM

বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেন ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকার আদায় পরিষদ’।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সভাপতি নূর মোহাম্মদ খান লস্কর পদে নিয়োগ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পাশাপাশি লস্কর পদে কোন কোটার এবং কোন জেলার কতজন নিয়োগ পেয়েছেন তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

নূর মোহাম্মদ খান বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি-বসতবাড়ি বন্দরের পরিধি বৃদ্ধির নামে পর্যায়ক্রমে হুকুম দখল করা হয়েছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চাহিদার যোগান দিতে না পারায় আমাদের সন্তানরা বন্দরে চাকরি পায়নি।

“সম্প্রতি লস্কর পদে স্থানীয় বাসিন্দা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ প্রতিবন্ধী নাইমুল হককে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সাথে ঢাকায় তার বাসায় গিয়ে আলোচনা করি। বন্দরের নিরাপত্তা অফিসটিও নাইমুলদের পৈত্রিক জমির ওপর। ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো কোটা নেই কিন্তু বিষয়টি মানবিকতা ও বাস্তবতার।”

মন্ত্রীর সাথে আলাপচারিতার বর্ণনা দিয়ে নূর মোহাম্মদ খান বলেন, “মন্ত্রী বললেন আপনারা লোকাল এমপির কাছে যান। স্থানীয় এমপির সুপারিশ পেলেই তিনি চাকরি দিতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন।

“এমপিকে (এম এ লতিফ) যখন ফোন করলাম তিনি বললেন- ‘মন্ত্রীর সাথে আমার যুদ্ধ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার হোক বা প্রতিবন্ধী কোটার লোক হোক অমার পক্ষে চাকরি দেওয়া সম্ভব না। আমি মিথ্যা আশ্বাস দিতে পারব না’।”

নূর মোহাম্মদ খান বলেন, “২০১৩ সালে লস্কর ও খালাসি পদে পটিয়ার এমপি শামসুল হক বিচ্ছু তো শ’খানেক লোক নিয়োগ দিয়েছিলেন। আমাদের এমপি যু্দ্ধ করে কয়জনকে নিয়োগ দিয়েছেন তা জানতে চাই।

“এমপি তার সম্মান বজায় রাখতে পারেননি। বন্দর যেহেতু তার এলাকায় তিনি জোরালো ভূমিকা রাখলে বঞ্চিতরা চাকরি পেত। মন্ত্রীর আত্মীয়রা হয়ত চাকরি পেয়েছেন। এমপি হয়ত বন্দর থেকে অন্য সুযোগ পাচ্ছেন তাই ভূমিকা রাখতে পারেননি।”

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, সংসদে যখন এ নিয়ে তোলপাড় তখনো এমপির কোনো বিবৃতি নেই। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন যে বক্তব্য দিলেন তা মন্ত্রীকে ডিফেন্ড করে।

“একটা মাফিয়া চক্র বন্দরকে হাতিয়ে নিচ্ছে। তাই একজনের সমস্যা হলে অন্যজন কথা বলে।”

নূর মোহাম্মদ খান বলেন, লস্কর পদে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, প্রতিবন্ধী এমনকি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হিসেবেও কেউ চাকরি পায়নি। ফটিকছড়ির এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো. হারুন স্থানীয় এমপির ডিও লেটার দেওয়ার পরও চাকরি হয়নি।

নিয়োগের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির কথা জানাতে একাধিকবার চেষ্টা করেও বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে পারেননি বলেও জানান তিনি।

নূর মোহাম্মদ খান বলেন, বন্দরের জনবল নিয়োগে মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান যেভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাতে প্রধানমন্ত্রীর সব অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। জনবান্ধব মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান নিয়োগ চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, নগরবাসীর ক্ষোভ ও সংসদে প্রতিবাদের কারণে নৌমন্ত্রী ও বন্দর চেয়ারম্যান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়োগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

বন্দরের নিয়োগ কমিটির সদস্য ও তাদের স্ত্রী সন্তানদের ব্যাংক হিসাব তল্লাশি এবং দুদককে বন্দরের নিয়োগ কর্মকাণ্ডে জরুরি তদারকির দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

ক্ষতিগ্রস্তদের চাকরি দেওয়ার দাবি আদায় না হলে জনসভা, বিক্ষোভ সমাবেশ, বন্দর ভবন ঘেরাও এবং প্রয়োজনে হরতালের ডাক দেওয়া হবে বলে পরিষদ নেতারা জানান।

চট্টগ্রাম বন্দরের লস্কর পদে সাম্প্রতিক নিয়োগে মাদারীপুর জেলা থেকে বেশি চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ পেয়েছে এমন অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান অভিযোগ প্রত্যাখান করে রোববার বলেন, মেধার ভিত্তিতেই তার জেলার প্রার্থীরা ওই পদে চাকরি পেয়েছে।

ইতিমধ্যে মঙ্গলবার বন্দরের লস্কর পদে নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘আমরা চট্টলবাসী’ নামের একটি সংগঠন।