আসামিদের অনেককে বিভিন্ন সময়ে মিছিল-সমাবেশে দেখা গেলেও তাদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনের কোনো তৎপরতাও নেই বলে দিয়াজের স্বজনদের অভিযোগ।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, এ ঘটনার তদন্ত চলছে এবং আসামিদের ‘পেলেই’ ধরা হবে।
গত বছরের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ।
তিন দিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। তার ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে শুরু থেকেই দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ বলে দাবি করে আসছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সে সময়ের সভাপতি আলমগীর টিপু, ছাত্রলীগ নেতা আবুল মনসুর জামশেদ, তাদের অনুসারী রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমানও হন আসামি।
আসামিরা সবাই চট্টগ্রামের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দিয়াজও ছিলেন নাছিরেরই অনুসারী।
দিয়াজের মায়ের আপত্তিতে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়। এরপর দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। এজন্য তারা চট্টগ্রামে দিয়াজের লাশ উদ্ধারের স্থানেও যান।
এরপর গত ৩০ জুলাই দেওয়া দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তারা বলেন, দিয়াজের শরীরে হত্যার আলামত রয়েছে।
এ প্রতিবেদনের পর দিয়াজের মায়ের করা এজাহার হত্যামামলা হিসেবে নিতে হাটহাজারী থানার ওসিকে নির্দেশ দেয় আদালত। বর্তমানে ওসি বেলাল উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর নিজেই মামলাটির তদন্ত করছেন।
দিয়াজের বড়বোন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক বছর হয়ে গেছে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে, তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। আদালতে যতটুকু হবার হয়েছে। প্রশাসন কোনো ধরনের সাহায্য করছে না।
“আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির বিশেষ নির্দেশনার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না।”
আদালতে দিয়াজের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার পর গত ১০ অগাস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে মিছিলে দেখা গেছে আসামি টিপু, মনসুরুলসহ কয়েকজনকে।
গত ৭ অগাস্টও ছাত্রলীগের একটি কর্মসূচিতে তাদের দেখা গেছে।
গত ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার সময়ও টিপুর নেতৃত্বে কয়েকজন সেখানে ছিলেন।
দিয়াজ হত্যা মামলার আসামি টিপু চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবির জোড়া খুনের মামলারও আসামি।
তবে টিপু সংগঠনের সহকর্মী দিয়াজের মৃত্যুর সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আসামিদের প্রকাশ্যে দেখা গেলেও তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা তাদের খুঁজছি। কিন্তু না পেলে তো কিছুই করার নেই।”
দিয়াজের বোন জুবাঈদা বলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তারে দেরি হচ্ছে বলে গুরুত্বপূর্ণ এ ঘটনার আলামত নষ্ট হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে যদি জবানবন্দি নেওয়া না হলে এ ঘটনা প্রমাণ করা যাবে না।”
নারায়ণগঞ্জের সাত খুন এবং ঢাকার বিশ্বজিৎ দাস হত্যামামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “সরকারদলীয় কেউ হত্যায় যুক্ত থাকলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এসবের বিচার হয় না। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল বলেই ওই দুই মামলার বিচার হয়েছে।”
দিয়াজের হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারেও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তার বোন।