ডিসি হিলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ‘নিষেধাজ্ঞা’ তুলে নেয়ার দাবি

চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র ডিসি হিলে অনুষ্ঠান আয়োজনে ‘নিষেধাজ্ঞা’ তুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বন্দর নগরীর সংস্কৃতিকর্মীরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2017, 02:36 PM
Updated : 11 Nov 2017, 02:36 PM

শনিবার বিকালে ডিসি হিলের অদূরে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে ‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম’ এর ব্যানারে সমাবেশ হয়।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে শহীদজায়া ও ভগ্নি বেগম মুশতারী শফি বলেন, “যেখানে সরকার জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মৌলবাদ প্রতিরোধে সারাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে জোর দিয়েছে, সেখানে ডিসি হিলের মতো স্থানে অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করবে না- এতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।”

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রাম ও খেলাঘরের সভাপতি একিউএম সিরাজুল ইসলাম, সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার কারণে চট্টগ্রামের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠক ও শিল্পীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

“এ সিদ্ধান্ত ‘সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার’ প্রতিবন্ধক ও বাঙালি ঐতিহ্যের লোক সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।”

সমাবেশে উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি চন্দন দাশ বলেন, ডিসি হিলে তিনটি অনুষ্ঠান ছাড়া সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে, আমরা তার প্রতিবাদ জানাই।

“তবে কি চট্টগ্রামে সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিতে চান প্রশাসন? তবে কি বিপ্লবের পূন্যভূমি চট্টগ্রাম প্রতিক্রিয়াশীল অন্ধকারের শক্তির দখলে চলে যাবে?’

সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান বলেন, “এসব অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্থ হচ্ছে- সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের টুঁটি চেপে ধরা।

“অতীতেও এ ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের সংস্কৃতি কর্মীরা সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আগামীতেও এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠবে।”

গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ডিসি হিলে বছরে তিনটি ছাড়া অন্য অনুষ্ঠান আয়োজন না করতে আহ্বান জানান।

এই তিন অনুষ্ঠান হল- পহেলা বৈশাখ এবং রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী।

এরপর থেকেই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ডিসি হিলে আর কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো লিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।

ডিসি হিলে অনুষ্ঠান আয়োজনে ‘নিষেধাজ্ঞা’ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনটি ছাড়া অন্য কোনো অনুষ্ঠানের করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করেন জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুকুর রহমান সিকদার।

ডিসি হিলে বাংলা নববর্ষের উৎসব ছাড়াও বই মেলা, লোক সংস্কৃতি উৎসব, নবান্ন উৎসব, বসন্ত উৎসব, বর্ষাবরণের মতো নানা উৎসব উদযাপন করা হয়।

পাশাপাশি উদযাপন করা হয় মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে সংঘটিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহর বার্ষিকী, শ্রমিক আন্দোলনের ঐতিহাসিক মে দিবসের বার্ষিকী।

শনিবারের প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুচরিত দাশ খোকন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক কুন্তল বড়ুয়া, কবি আশীষ সেন, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা বক্তব্য রাখেন।

উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপেন চৌধুরী, সঙ্গীত শিল্পী মানস পাল চৌধুরী, সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ স্বর্ণময় চক্রবর্তী, অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সঞ্জিত আলম, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পাল এবং শিশুমেলার পরিচালক রুবেল দাশ প্রিন্স।