গৃহকর: অপপ্রচারকারীদের হুমকি মেয়র নাছিরের

বর্ধিত গৃহকর নিয়ে যারা অপপ্রচার ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনার হুমকি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2017, 05:28 PM
Updated : 22 Oct 2017, 05:28 PM

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) সাধারণ সভায় বক্তব্যে এই হুমকি দেন তিনি।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির নাম না বললেও গৃহকর নিয়ে তার বড় সমালোচনা আসছে নিজের দল থেকেই। নগর কমিটির সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী গৃহকর বাড়ানোর চরমবিরোধিতা করছেন।

সিসিসির সভায় নাছির বলেন, “ট্যাক্স ইস্যুতে যারা ব্যক্তি বা সংগঠনের ব্যানারে নানামুখী অপপ্রচার চালাচ্ছেন, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তারা আইনের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

“তাদের সমস্ত স্টেটমেন্ট (বক্তব্য) সিসিসি সংরক্ষণ করছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি আইন অমান্যকারী হিসেবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হবে।”

তারা কারা- স্পষ্ট হতে জানতে চাইলে মেয়র নাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবাই নয়, তথাকথিত সুরক্ষা কমিটির নামে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য রেখেছেন।

“নগরবাসীকে কর না দিতে, আপিল না করতে আহ্বান জানিয়ে লাগামহীন কথা বলেছেন। এটা আইন অমান্য করা এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। উনারা আদালতেও গিয়েছিলেন। হেরে গেছেন। আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তো কেউ কোনো কাজ করতে পারে না।”

মেয়র নাছির বলেন, এ বিষয়ে আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত বছরের মার্চে সিসিসি কর পুনর্মূল্যায়ন শুরু করলে আন্দোলনের ডাক দেয় করদাতা সুরক্ষা পরিষদ নামের নগরীর বাড়িওয়ালাদের একটি সংগঠন।

ইতোমধ্যে নগরীর বেশকিছু ওয়ার্ড কার্যালয় ঘেরাও, কাউন্সিলরদের স্মারকলিপি প্রদান, সমাবেশ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পরিষদ।

পরিষদ ছাড়াও নগর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ১৪ দল, ইসলামী ফ্রন্ট, গণঅধিকার ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন বর্ধিত গৃহকরের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে।

সাবেক দুই মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মনজুর আলম চিঠি দিয়ে মেয়রকে বর্ধিত করের বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে বর্ধিত কর আদায়ে নিজের অবস্থানে অনড় মেয়র নাছির নগরবাসীকে আপিলে ‘সর্বোচ্চ ছাড়’ দেয়া হবে জানিয়ে আপিলের পথ দেখিয়েছেন।

রোববার সাধারণ সভায় মেয়র নাছির বলেন, “জনগণের কথা চিন্তা করেই আমি সরকারি গেজেট অনুযায়ী ২৭ শতাংশ ট্যাক্স না নিয়ে ১৭ শতাংশ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১৬টি ওয়ার্ডে ১৪ শতাংশ ট্যাক্স আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

“এখন আমি রীতিমতো শঙ্কিত সরকারি গেজেট থেকে কম ট্যাক্স আদায়ের সিদ্ধান্তের কারণে মন্ত্রণালয় কখন আমার বিপরীতে নির্দেশনা জারি করে।”

সভায় তিনি বলেন, ২৯ অক্টোবর থেকে আপিল বোর্ডে আপিল নিষ্পত্তি শুরু হবে। যে কেউ আপিল করতে পারবেন।

নাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি আপিল বোর্ড আগে থেকেই ছিল। আরও সাতটি আপিল বোর্ড দুয়েকদিনের মধ্যেই করা হবে।

ফেইসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া

সভার সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যের বিস্তারিত তুলে ধরে বিকাল ৫টায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দেন মেয়র।

ওই পোস্টে রাত ৮টা পর্যন্ত ৪২ জন মন্তব্য করেছেন। এরমধ্যে অল্প কয়টি ছাড়া বাকি সবই নগরবাসীর তীব্র প্রতিক্রিয়া।

নগরীর জলাবদ্ধতার ছবি দিয়ে মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন ইমরান নামের একজন লিখেছেন, “নাগরিক সেবা নিশ্চিত না করে ট্যাক্স বেকুবি ছাড়া অন্য কিছু নয়।”

রহিম করিম নামের একজন লিখেছেন, “আপনার আগেও অনেকে মেয়র ছিল উনারা আপনার মতো এত ট্যাক্সের বোঝা চাপায় নাই। আপনি যে সুরে কথা বলছেন সেটা স্বৈরাচারী শাসকের ভাষা, জনপ্রতিনিধির ভাষা না।”

চৌধুরী সুমন লিখেছেন, “আপনি মেয়র বলেই চট্টগ্রাম উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে.. ক্লিন সিটি হয়েছে ওয়াটারফুল সিটি… বাড়তি সুবিধা হিসেবে পানিময় চিটাগাং.., এই বাড়তি বিলাসী সুবিধার কারণে ট্যাক্স তো দিতেই হবে।”

আদনান সুমন নামের একজন লিখেছেন, “চট্টগ্রাম নগরের এখন যে অবস্থা এই নগরে থাকার জন্য নগরবাসীকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মাসিক ভর্তুকি ও ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।”

কোরবান আলী জুমন নামের একজন লিখেছেন, “চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বিরোধী দলের দরকার নেই, গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্সই যথেষ্ট।”

মেয়রের পক্ষে ফারুক হোসেন নামে একজন লিখেছেন, “আসলে ভাড়ার ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করাই রাইট, আমরা শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধীতা করি।”

নুর আবসার লিখেছেন, “প্রিয় নেতা এগিয়ে যান। যত বাধাই আসুক না কেন আপনি পারবেন।”