বছরের শেষভাগে ফের ডুবলো বন্দরনগরী

স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের সাথে কার্তিকের প্রথম সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হলো বন্দরনগরীর বেশ কিছু এলাকা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2017, 02:44 PM
Updated : 21 Oct 2017, 02:44 PM

নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক, বেপারিপাড়া, শান্তিবাগ, ছোটপোল, পশ্চিম নিমতলা, বারিক বিল্ডিং মোড়, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট তালতল, ফরিদার পাড়া, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, পশ্চিম মাদারবাড়ি, সিডিএ আবাসিক এলাকা, মুহুরি পাড়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এবং বাকলিয়া ও হালিশহরের কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

আশি লাখ মানুষের এ শহরে পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন হয় চাকতাইসহ অর্ধশতাধিক খাল দিয়ে। কিন্তু অবৈধ দখল, ভরাট আর বর্জ্যে বোঝাই এসব খাল ভারি বৃষ্টি হলেই আর পানি সরাতে পারে না; সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

চলতি বছর পরিস্থিতি এতটাই খারাপ আকার ধারণ করেছে যে, ভারি বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রাম নগরীর অর্ধেক এলাকায় পানি জমে যাচ্ছে। জোয়ারের সময় পানি নামতে দেরি হওয়ায় বাড়ছে ভোগান্তি। কেবল জুলাই মাসেই অন্তত পাঁচ দফা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বন্দরনগরীতে।

স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েই রেখেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শনিবার সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও বেলা বাড়ার সাথে বাড়তে থাকে বৃষ্টির তোড়। দুপুরের পর থেকে ঝড়ো বাতাসের সাথে শুরু হয় ভারি বৃষ্টি। পাল্লা দিয়ে নগরে জলাবদ্ধতাও বাড়তে থাকে।

বেলা ২টার দিকে আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে হাঁটু পানি দেখা গেছে। পানি ডিঙ্গিয়ে বাসায় ফিরতে হয়েছে স্কুল শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন বলেন, “রাস্তায় জোয়ারের পানি ছিলই, বৃষ্টিতে তা আরো বেড়েছে।

বরাবরের মতো এই বৃষ্টিতেও ডুবেছে নিতপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকা।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকালের চেয়ে আজ পানি বেশি হয়েছে।

“চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নারিকেল, পেঁয়াজ ও ভুষিমালের বেশ কিছু গুদাম ও আড়তে পানি ঢুকেছে। চলতি বছর বর্ষায় ঘনঘন পানি উঠায় অনেকে পানি ঠেকাতে দেয়াল তুলেছিল। তাই সব গুদামে পানি ঢোকেনি। পানি নামার পর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা যাবে।”

সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বেশিরভাগ এলাকাতেই পানি ছিল হাঁটুর নিচে। তবে সন্ধ্যার পর নিয়মিত বিরতিতে ভারি বৃষ্টি হচ্ছিল।

নিম্নচাপের কারণে উত্তাল সাগর। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

নিম্নচাপের কারণে পতেঙ্গায় জোয়ারের পানি বাঁধের পাথর উপচে সৈকতেরাঅস্থায়ী দোকানগুলোতে ঢুকে পড়ে।

বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে থাকা জাহাজগুলোতে পণ্য উঠানামা বিঘ্নিত হয়েছে বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “বহির্নোঙ্গরে ১৪০টির মত জাহাজ আছে। যেসব জাহাজের হেচ (পণ্য রাখার স্থান) খুলে পণ্য লোডিং-আনলোডিং করতে হয় সেগুলোতে কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে।

“তবে বন্দরের জেটিতে থাকা কন্টেইনারবাহী জাহাজগুলোর কাজে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।”

এদিকে দুপুরে দমকা বাতাস শুরুর পর থেকে নগরীর কাজীর দেউড়ি, আসকার দিঘীর পাড়, এনায়েত বাজার, পশ্চিম মাদারবাড়ি, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

রোববার থেকে উন্নতি

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্থল নিম্নচাপটি বিকাল ৩টার দিকে টাঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল।

“এটি আরও উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের আধিক্য আছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে বৃষ্টি হচ্ছে। রোববার থেকেই অবস্থার উন্নতি হবে।”

নগরীর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ দশমিক ছয় মিলিমিটার এবং আমবাগান আবহাওয়া অফিসে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যায় ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।