মহিউদ্দিনের বাড়িতে মনজুর, নাছিরকে চরমপত্র

বর্ধিত গৃহকর কমাতে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সময় বেঁধে দিয়েছেন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2017, 03:47 PM
Updated : 17 Oct 2017, 04:22 PM

সোমবার রাতে ১৪ দলের এক বৈঠক থেকে মেয়র নাছিরকে এই চরমপত্র দেন মহিউদ্দিন; এই বৈঠকে সাবেক আরেক মেয়র এম মনজুর আলমও ছিলেন।

বিএনপির মেয়র মনজুরের সঙ্গে বসে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিনের দলের নগর সাধারণ সম্পাদক নাছিরকে চরমপত্র দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

এই পরিস্থিতিতে বুধবার সকালে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন মেয়র নাছির।

সোমবার রাতে নিজের চশমা হিলের বাসায় ১৪ দলের এক সভায় মহিউদ্দিন বলেন, গৃহকর নিয়ে গণঅসন্তোষ থাকলেও মেয়রের ভূমিকা এখনও ‘আক্রমণাত্মক’।

“এক মাসের মধ্যে বর্ধিত গৃহকর প্রত্যাহার না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য মেয়রকে দায়ী থাকতে হবে।”

না কমালে কী পদক্ষেপ- জানতে চাইলে মহিউদ্দিন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছি। দেখি কী হয়। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ওই বৈঠকে থাকার বিষয়ে মনজুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো উনার (মহিউদ্দিন) বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম।

“তখন ১৪ দলের সভা শেষ পর্যায়ে ছিল। আমাকে বসতে বলায় আমি বসেছিলাম। সেই সময়ই ছবি তোলা হয়।”

এক সময় আওয়ামী লীগে থাকা মনজুর বিএনপিতে গিয়ে মেয়র হলেও এখন দলটির সঙ্গে সম্পর্ক সেভাবে রাখছেন না।

১৪ দলের বৈঠকে মনজুর আলমের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র নাছির হেসে তা এড়িয়ে যান।

দেখা করতে যায়নি আ. লীগ নেতারা

মঙ্গলবার বিকালে মেয়রের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত থাকলেও তারা যাননি।

এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হঠাৎ বৈঠক নির্ধারিত হওয়ায় যারা যাবেন, তারা সবাই সময় করতে পারেননি।

“মেয়র দুয়েক দিন পর সময় দিলে অবশ্যই দেখা করব। জনগণ ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে সেতুবন্ধন করতেই আমরা দেখা করতে চাই।”

এদিকে মেয়রের কাছে না গেলেও মঙ্গলবার দুপুরে নগর কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় তার প্রয়াত মেয়ে ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পার নবম মৃত্যুবার্ষিকীর মেজবানে অংশ নেন নেতারা।

নিজের দলের নেতাদের সাক্ষাতের বিষয়ে নাছির বলেন, “আমি মেয়র এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নগর আওয়ামী লীগে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

মহিউদ্দিনের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “দলের যে কোনো নেতা ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার অধিকার রাখেন। তবে দলীয় বক্তব্য কোথায়, কীভাবে দিব, তার বিষয় আছে। আমরা সরকারি দল। সরকারি দলের কি বিরোধী দলের মতো আচরণ করা সমীচীন?”

ভোটের হিসাব নাছিরের ভাবনায়ও

গৃহকর নিয়ে বিরোধিতার মুখে অনড় হলেও ভোটের চিন্তা মাথায় রয়েছে এই প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়া আ জ ম নাছিরের।

তিনি বলেছেন, “আমারও তো আপনাদের কাছে যেতে হবে। আজ মেয়র আছি। যদি আবার ইলেকশন করি আমাকে জনগণের কাছে যেতে হবে না?”

মঙ্গলবার বিকালে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃবিবেচনার দাবিতে চট্টগ্রাম আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির নেতারা স্মারকলিপি দিতে গেলে একথা বলেন নাছির।

এই বিষয়ে আলোচনার আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি চাই, যা হওয়ার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হোক। যদি কারও বক্তব্য আমলেই না নিই,তাহলে সমালোচনা বা অভিযু্ক্ত করতে পারবেন।

“প্রত্যেক করদাতার বক্তব্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শুনে সে হিসেবে নিষ্পত্তি করা হবে। যার যা সামর্থ্য তাই দেবেন।”

আগের মেয়ররা ১৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় না করলেও তিনি কেন চান- সাংবাদিকদের প্রশ্নে মেয়র নাছির বলেন, “আগে আইন ছিল কাগজে কলমে, কোনো প্রয়োগ ছিল না।

“মন্ত্রণালয়ের আগে কোনো নজরদারি ছিল না। মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়ের মত চলত। প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের মত চলত। আইন মেনে প্রশাসন চালাতে হয়। কাউকে তুষ্ট করে প্রশাসন চালানো যায় না।”

নাছির বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অতীতে তার উপর অর্পিত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে না পারায় চট্টগ্রাম পিছিয়ে গেছে।

“সক্ষমতা না থাকলে তো সিটি করপোরেশন নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পারবে না। এটা দিবালোকের মতো সত্য। মিট দ্য প্রেসে সব তুলে ধরব। যাতে নাগরিকরা ধারণা পান তারা কী পরিমাণ ট্যাক্স দেন এবং কেন ট্যাক্স দিচ্ছেন।”