পুনর্মূল্যায়নের পর বর্ধিত গৃহকর নিয়ে নানামুখী চাপের মধ্যে সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) কাউন্সিলরদের সাথে মতবিনিময় সভায় বসেন মেয়র।
সভায় মেয়র জানান ১৮ অক্টোবর এ বিষয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন।
পুনর্মূল্যায়ন শুরুর পর প্রায় দেড় বছর ধরে আন্দোলন করা করদাতা সুরক্ষা পরিষদের রোববারের সভা থেকে বাড়তি গৃহকর প্রত্যাহার না করলে কর না দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
এছাড়া নগর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ, গণ অধিকার ফোরাম, ইসলামী ফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন বর্ধিত গৃহকরের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে আগের দুই মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মনজুর আলম গৃহকর কমাতে মেয়রকে চিঠিও দিয়েছেন।
সোমবারের সভায় সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলিয়ে ৫৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। তবে মাত্র সাতজন কাউন্সিলর বক্তব্য রাখেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন দুইজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সভায় কাউন্সিলররা বর্ধিত গৃহকর নিয়ে নগরবাসীর অসন্তোষের কথা জানান। আগের নিয়মে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধও করেন কয়েকজন।
কিন্তু মেয়র নিজের অবস্থানে অনড় থেকে এলাকার বাসিন্দাদের আপিলে উদ্বুদ্ধ করতে বলেছেন বলে জানান তারা।
গৃহকর পুনর্মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ, কয়েকগুণ বেশি গৃহকর ধার্য করা, সাধারণ আয়ের মানুষের উপর দ্বৈত করের চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাউন্সিলরা বক্তব্য দেন সভায়।
কাউন্সিলরদের বক্তব্যের পর মেয়র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
“কেউ সন্তুষ্ট হবে, কেউ অসন্তুষ্ট হবে। সবাইকে খুশি করে নগরীর উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করা যাবে না। যার যার অবস্থান থেকে এলাকাবাসীকে বুঝান তারা যেন আপিল করে। আপিল করলে আইন অনুসারে যথাসাধ্য কমানো হবে। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই,” বলেন মেয়র।
এসময় মেয়র করপোরেশনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেন।
সভায় এক কাউন্সিলর মেয়রের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি রাজনীতি করেন। যেভাবে কর ধার্য করা হচ্ছে তাতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। মানুষের পাশে থাকতে হবে।”
জবাবে মেয়র নাছির বলেন, “মানুষের জন্য রাজনীতি করি সেটা ঠিক। কিন্তু বার বার মেয়র-কাউন্সিলর হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।”
বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্সের বিরুদ্ধে নগরীতে চলমান আন্দোলন ‘রাজনৈতিকভাবে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে উসকে দেওয়া হচ্ছে’ বলেও মন্তব্য করেন মেয়র।
সভায় উপস্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল বালী বলেন, “আমরা মেয়রকে বলেছি, চট্টগ্রামবাসী আপনাকে ভোট দিয়েছে। আপনার কাছে তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা আছে। তাদের খুশি করার দায়িত্ব আপনার। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়েও জোর দিতে বলেছি।
“উনি বলেছেন- ইনশাল্লাহ খুশি করব। আপিল করতে বলুন। রিভিউ বোর্ড করা হয়েছে। অভিযোগ শুনে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে।”
আরেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন মেয়র। ইতিমধ্যে গৃহকর আদায় সন্তোষজনক নয় জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একাধিক চিঠি দেয়ার কথাও সভাকে জানান মেয়র।
“উনি বলেছেন- যাদের সামর্থ্য নেই তাদের বিষয়ে কাউন্সিলররা প্রত্যয়ন দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢালাও অভিযোগ না করে পদ্ধতিগত ভুল না কি মূল্যায়নের ভুল সেটা রিভিউ বোর্ডকে জানাক। আপিলের পর অভিযোগ শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়াই একমাত্র পদ্ধতি। আর কোনো উপায় নেই।”
রাতে সিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুর রহিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সভার বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে সভায় মেয়রের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, হোল্ডিং এসেসেমেন্ট বিষয়ে জটিলতা বা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে নগরবাসী রিভিউ বোর্ডে আপিল আবেদন করতে পারবেন।