সুদীপ্ত হত্যায় ‘সরাসরি অংশ নেন’ গ্রেপ্তার মোক্তার

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবক মোক্তার হোসেন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2017, 11:47 AM
Updated : 14 Oct 2017, 01:00 PM

শনিবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসেন।

নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেওয়া মোক্তার (২৯) সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী বলে পরিচিত। তবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাইন বলেন, “গ্রেপ্তারের পর মোক্তার প্রাথমিকভাবে এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছেন, যেগুলো আমরা ভেরিফাই করছি।”

গত ৬ অক্টোবর সকালে দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। এ ঘটনায় সুদীপ্তর বাবা বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা সাত থেকে আটজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।

হত্যাকাণ্ডের পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছিলেন, নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারীরাই সুদীপ্তকে পিটিয়ে মেরেছে বলে তাদের সন্দেহ।

ছাত্রলীগের একাংশের নেতাদের ভাষ্য, বিগত কয়েক দশক ধরে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা থাকলেও কয়েক বছর ধরে তার বিপরীতে একটি অংশ দাঁড়িয়েছে। তাদের একাংশের নেতৃত্বে আছেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিদারুল।

সুদীপ্তর সহপাঠীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের মধ্যকার বিভেদ নিয়ে সুদীপ্ত ফেইসবুকে লেখালেখি করতেন। তাতেই ওই অংশের নেতারা তার প্রতি ক্ষিপ্ত হন বলে মনে করছেন অনেকে।

সুদীপ্ত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে গত ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করে একাংশের নেতারা।

কাদের এসময় দ্রুত সময়ে সুদীপ্ত হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরদিন বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নগর ছাত্রলীগের নেতারা পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। 

আলটিমেটামের শেষ দিন শুক্রবার রাতে নগরীর বড়পুল এলাকায় শাহী বাস কাউন্টার থেকে পুলিশ মোক্তারকে গ্রেপ্তার করে।

ভোলায় শ্বশুর বাড়িতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য মোক্তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাস কাউন্টারে গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন বলছে পুলিশ।

উপ-কমিশনার মোস্তাইন বলেন, সুদীপ্তর সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন মোক্তার। তবে অন্যদের সঙ্গে বিরোধের জেরে সুদীপ্তকে হত্যা করা হয়। যেখানে তিনি নিজেও সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন।

মোক্তার নগর যুবলীগের নেতা এবং দিদারুল আলমের অনুসারী বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে মোস্তাইন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে আরও কারা কারা জড়িত আছেন, সেটি বের করা হবে।

‘মোটর সাইকেলে গিয়েছিলেন মোক্তার’

অন্তত ১৫টি অটোরিকশা ও তিনটি মোটর সাইকেলে করে হত্যাকারীরা সুদীপ্তকে হত্যার উদ্দেশে গিয়েছিল বলে আগেই জানিয়েছিল পুলিশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা শনিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোটর সাইকেলে করে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন মোক্তার।

তিনি বলেন, সদরঘাট এলাকায় একজন তাদের বাসার ঠিকানা দেখিয়েছিল। আর সে অনুসারে তারা দক্ষিণ নালাপাড়ায় ঢুকেছেন।

ঘটনার দিন দুপুরে সুদীপ্ত মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারার কথা জেনেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন মোক্তার। ওই দিন রাতেই তার এক সহপাঠী মোক্তারকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল।

সেজন্য ঘটনার পরদিন ৭ অক্টোবর মোক্তার কক্সবাজার পালিয়ে যান। সন্তানের অসুখের খবর পেয়ে মঙ্গলবার তিনি চট্টগ্রাম চলে আসেন। পরে স্ত্রীর অনুরোধে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় শুক্রবার রাতে বাস কাউন্টারে ধরা পড়েন তিনি।