পাবর্ত্য জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সাজেক ভ্যালি নামে পরিচিত এই উপত্যকায় ২০১৪-২০১৫ সালেও পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা বলতে ছিল সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত গোটা দশেক কটেজ বা রিসোর্ট। গত তিন বছরে এ সংখ্যা আশিতে পৌঁছেছে।
স্থানীয় কটেজ মালিক সমিতি, সেনাবাহিনী এবং হেডম্যানরাও মানছেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এসব রিসোর্ট, হোটেল বা পাকা স্থাপনা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের ক্ষেত্রে পর্যটকদের দৃষ্টিসীমায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন, সেজন্য স্থাপনা নির্মাণে নিয়ন্ত্রণ আনা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মাধ্যমে নীতিমালা করার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
“কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে গিয়ে দেখলাম যেখানে সেখানে কটেজ আর হোটেল বানিয়েছে। রুইলুই পাড়ায় রাস্তার দুই পাশে দোতলা-তিনতলা এসব স্থাপনার কারণে দৃষ্টি আর দিগন্তে পৌঁছাতে পারে না। এখন অনেক বেশি নোংরা আবর্জনা চারপাশে।”
এভাবে নিয়মনীতি ছাড়া রিসোর্ট, কটেজ বানালে তার ভিড়ে সাজেক তার সৌন্দর্য আর পর্যটকদের আকর্ষণ হারাবে বলে মনে করছেন এই শিল্পী।
সম্প্রতি সাজেক ঘুরে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে মাজহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওখানে পাহাড়, মেঘ মিলিয়ে প্রকৃতির অন্যরকম সৌন্দর্য দেখা যায়, দেশে অন্য কোনো পাহাড়ি এলাকায় তেমনটা পাওয়া যায় না। কিন্তু এখন যেভাবে ইট আর কাঠ দিয়ে উঁচু উঁচু কটেজ বানাচ্ছে, সেগুলো দৃষ্টিসীমায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।”
কিন্তু এখন ওই জায়গা আর খালি নেই। সেখানে পাহাড়ের ঢালে বানানো হয়েছে ‘মেঘের ঘর রিসোর্ট’ নামের এক দোতলা বাড়ি। তার একটু পেছনে নির্মিত হচ্ছে তিন তলা আরেকটি রিসোর্ট। পাশেই হয়েছে ‘হোটেল অধরা’ নামে আরেকটি স্থাপনা।
রুইলুইয়ের প্রবেশপথ থেকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত পথের দুপাশের অবস্থাও প্রায় একই। বিভিন্ন রিসোর্ট আর কটেজের পাশে পর্যটকদের ব্যবহৃত আবর্জনা এবং ফেলে রাখা নির্মাণ সামগ্রীর কারণে মনোরম সেই পাহাড়ি পল্লী এখন অনেকটাই অপরিচ্ছন্ন।
স্থানীয় রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুইলুই পাড়ায় এখন আশিটির মত রিসোর্ট, হোটেল, কটেজ ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। এর মধ্যে পাড়ায় প্রবেশের পর রাস্তার বাঁ পাশে রয়েছে ২৬টি; বাকিগুলো ডান পাশে।
রুইলুই কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেববর্মন জানান, এসব কটেজ, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁর মধ্যে ৪৩টি তাদের তালিকাভুক্ত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখানকার জমির মালিক যারা, তারা অধিকাংশই গবিব। তাদের কিছু টাকা দিয়ে জমি লিজ নিয়ে এসব হোটেল, কটেজ বানানো হচ্ছে। যে চাইছে, সেই বানাচ্ছে।”
কিন্তু তাতে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে মন্তব্য করে সাজেকে রিসোর্ট বানানোর বিষয়ে নীতিমালা করার ওপর জোর দেন লাল টাঙ্গা।
কটেজ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আদি বাসিন্দাদের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত নিয়ে হেডম্যানের অনুমতি আর সুপারিশের ভিত্তিতে তারা কটেজ বানিয়েছেন। আর নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয় তত্ত্বাবধান করছে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন।
সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা ও সৌন্দর্য ঠিক রাখতে রাঙামাটি জেলা ও বাঘাইহাট উপজেলা প্রশাসন মিলে এ নীতিমালা করার ওপর জোর দেন তিনি।
সাজেকে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতি, শুক্র বা বিভিন্ন উৎসবকেন্দ্রিক ছুটিতে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ গাড়িতে করে পর্যটকরা আসছেন। তার রাতে থাকছেন, ফলে কটেজ আর রিসোর্টের চাহিদাও বাড়ছে।
“অর্থনৈতিক দিকটি মাথায় রেখেই স্থানীয় লোকজন কটেজ বানানোর দিকে ঝুঁকছেন। স্থানীয়রা ভূমির মালিক, তারা কারও কাছে রিসোর্ট করার জন্য জমি দিলে অন্যদের কিছু করার নেই।”
সৌন্দর্য রক্ষার পাশাপাশি পাহাড়ে ঝুঁকি কমাতেও এসব স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে নীতিমালা করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রুইলুই কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণও প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সাজেকে স্থাপনা নির্মাণের নীতিমালা করার কথা বলেন।