সুদীপ্ত খুনের হোতাকে গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম ছাত্রলীগের

সংগঠনের নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডের হোতাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2017, 03:48 PM
Updated : 10 Oct 2017, 04:17 PM

তা না হলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও এর কর্মসূচি দেওয়ার ‍হুমকি দিয়েছে তারা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশের পরদিন মঙ্গলবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত হত্যার বিচার দাবিতে এক সমাবেশে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

নগর ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, “হত্যার নেপথ্যে কাজ করা খুনি চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করুন। কোনো টালবাহানা সহ্য করা হবে না।

“আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনের জন্য দায়ী প্রধান ব্যক্তিসহ খুনে অংশগ্রহণ করা সকলকে গ্রেপ্তার করা না হলে সিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।”

নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, “দিয়াজের হত্যাকারীদের বাঁচিয়ে দিতে সেদিন আত্মহত্যা বলা হয়েছিল। মেহেদী হাসান বাদলের লাশ দেখতে গিয়ে অনেকে গুপ্তহত্যা বলেছিল।

“সোহেলকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই হত্যা নিয়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক দখল-বেদখলের খেলা চলেছিল। আজকে আমাদের ভাই সুদীপ্তকে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে।”

যে পাঁচজন কাউন্সিলর ‘খুনির পক্ষ হয়ে’ বিবৃতি দিয়েছেন তাদের চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণার হুমকি দেন রনি।

গত রোববার নগরীর কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যা নিয়ে ‘অপরাজনীতির’ প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিল।

ওই বিবৃতিতে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম ও চকবাজার ওয়ার্ডের যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ করিম টিটুর বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ এর প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিদাতা পাঁচ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন- হাসান মাহমুদ হাসনী, তারেক সোলায়মান সেলিম, নাজমুল হক ডিউক, হাসান মুরাদ বিপ্লব ও মোহাম্মদ জুবায়ের।

এই পাঁচ কাউন্সিলর এবং লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নগর সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।

সুদীপ্ত হত্যার পর একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, সিটি কলেজে ছাত্রলীগে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের প্রতিপক্ষ এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারীরাই সুদীপ্তকে পিটিয়ে মেরেছে।

সোমবার চট্টগ্রামে এক স্মরণ সভায় ছাত্রলীগের বিক্ষোভের মুখে সুদীপ্তর হত্যাকারী ও নেপথ্যের চক্রকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সেই সভা শেষে তার গাড়ির সামনে বিক্ষোভরত ছাত্রলীগ নেতারা পাঁচ কাউন্সিলরের বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টিও ওবায়দুল কাদেরকেও জানিয়েছিলেন।

মঙ্গলবারের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নগর ছাত্রলীগের সগহ-সভাপতি তালেব আলী, ফারুক ইসলাম, নাজমুল হাসান, একরামুল হক রাসেল, নাঈম রনি, নোমান চৌধুরী, আফম সাইফুদ্দিন, সৌমেন বড়ুয়া প্রমুখ।

সমাবেশে হাসান মনসুর, মেজবাহ উদ্দিন মোরশেদ, মো. সেলিম, সঞ্চয় ভৌমিক কনকন, সরফরাজ মাসুম, সাইফুল্লাহ আনছারী, হাবিবুর রহমান তারেকসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা একাত্মতা প্রকাশ করেন।

সিএমপি কমিশনারের কাছে আ. লীগ নেতারা

সহযোগী সংগঠনের নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে নগর পুলিশের কমিশনারকে আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

মঙ্গলবার দুপুরে দলের একটি প্রতিনিধি দল সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহারের সঙ্গে দেখা করেন।

নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বলেছি সুদীপ্তর হত্যাকারী যেই হোক তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।

“জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেছেন- এ ঘটনায় দায়ীদের অবশ্যই খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”

কয়েকদিন আগে নগর আওয়ামী লীগের এক সভায় নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে চিঠি দিয়ে নগরীর বিভিন্ন সমস্যা জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। তার অংশ হিসেবে সিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিতে যান ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, শফিক আদনান, শফিকুল ইসলাম ফারুক ও হাসান মাহমুদ শমসের।