হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পার পেয়ে যাওয়ায় বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটির নেতারা। এজন্য চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভেদকে দুষছেন তারা।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হত্যা হচ্ছে, কিন্তু মূল খুনিরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। কেন তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না?
“এর পেছনে যে বা যারাই থাকুক আমরা মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।”
শুক্রবার সকালে নগরীর নালাপাড়ায় নিজের বাসার সামনে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে।
তার আগে গত বছরের ২৯ মার্চ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হন ছাত্রলীগের নগর কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য নাছিম আহমেদ সোহেল।
এদের মধ্যে দিয়াজ ও সোহেল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের এবং সুদীপ্ত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী ছিলেন।
সোহেল খুনের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে খুনিদের শনাক্ত করে ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন তার বাবা।
ওই ভিডিওতে মো. ইব্রাহীম ওরফে সোহান নামে এক যুবককে সোহলকে ছুরিকাঘাত করতে দেখা যায়।
নিহত ছাত্রলীগ নেতা সোহেল সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের পক্ষের হওয়ায় তার পক্ষের লোকজন এজন্য মহিউদ্দিনের অনুসারীদের দায়ী করলেও পরে দেখা যায় হত্যাকারীরাও একই পক্ষের।
এদিকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে থাকা চকবাজার থানার এসআই হুমায়ন কবির পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়েছেন। তার জায়গায় মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মো. শাজাহান এখনও পর্যন্ত অভিযোগপত্র দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, “মামলাটি এখনও তদন্ত পর্যায়ে আছে। তদন্ত পুরোপুরি শেষ হলে অভিযোগপত্র দেয়া হবে।”
গত বছরের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইফরানের লাশ।
দিয়াজের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তখন দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ময়নাতদন্তের পর ২৩ নভেম্বর চিকিৎসকরা ‘আত্মহত্যা’র কথা বলেন।
এরপর ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন বাদী হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তার আপত্তিতে লাশের পুনঃময়নাতদন্ত হয়।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত দিয়াজের মৃত্যুতে তার পরিবারের করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামশেদুল আলম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রক্টরকে আসামি করা হয়েছিল।
জামশেদ, টিপুও আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এরমধ্যে শুক্রবার সকালে নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ায় বাসা থেকে ডেকে এনে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নগর কমিটির সহ-সম্পাদক সুদীপ্তকে।
তার বাবা স্কুল শিক্ষক বাবুল বিশ্বাস বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে সুদীপ্তর সহপাঠীদের অভিযোগ, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, বিগত কয়েক দশক ধরে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা থাকলেও কয়েক বছর ধরে তার বিপরীতে একটি অংশ দাঁড়িয়েছে। তাদের একাংশের নেতৃত্বে আছেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতি, যিনি বর্তমানে নগরীর একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার অনুসারীরাই সুদীপ্তকে পিটিয়ে মেরেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ছাত্রলীগের মধ্যকার বিভেদ নিয়ে সুদীপ্ত ফেইসবুকে লেখালেখি করতেন। তাতেই ওই অংশের নেতারা তার প্রতি ক্ষিপ্ত হন বলে মনে করছেন অনেকে।
সুদীপ্তর হত্যাকারীরা কেউ ধরা পড়েছে কি না জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে এখনও দৃশ্যমান ও বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।”
চট্টগ্রামে একের পর এক ছাত্রলীগ নেতা খুন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগ ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। হঠাৎ করে কিছু ভিন্নমুখী মানুষ এতে প্রবেশ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আধিপত্য বিস্তার ও আদর্শহীন কাজ করছে।”
যারাই এ ধরনের কাজ করছেন তারা দলের নয়, অন্য কারও জন্য কাজ করছেন মন্তব্য করে ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বলেন, “অভিভাবক হিসেবে অবশ্যই আওয়ামী লীগ নেতাদের ছাত্রলীগকে লক্ষ্য ও আদর্শমুখী করা উচিত।”