চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত (২৫) সিটি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর করেছেন বছরখানেক আগে।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী।
তার পরিবারের সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না জানিয়ে সুদীপ্তর বাবা বাবুল বিশ্বাস বলছেন, রাজনীতি করতে গিয়েই তার ছেলে প্রাণ হারিয়েছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজনীতি না করার জন্য তাকে অনেকবার বলেছি। সে কারও কথা শোনেনি। রাজনীতিই তার কাল হল।”
এই কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১২ সালে। নেতাদের অনেক বয়স হওয়া নিয়েও ফেইসবুকে লিখছিলেন সুদীপ্ত।
নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত সুদীপ্ত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।
সিটি কলেজ ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাও এই পক্ষের হিসেবে পরিচিত। সেখানে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ শুরুর পর মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের অপরপক্ষের নেতারা ওই কমিটিতে নিজেদের অনুসারীদের আনার চেষ্টা করছিলেন বলে সংগঠনটির কয়েকজন নেতা জানান।
“কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ আছে। সব মিলিয়েই এ ঘটনা ঘটতে পারে।”
সুদীপ্তর একজন সহপাঠীও এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিটি কলেজ ছাত্রলীগ মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সেখানে নতুন কমিটির উদ্যোগ নিয়ে অন্য পক্ষের নেতারাও তৎপর। এ নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে।”
তার আগে বুধবার রাত ৭টা ৫০ মিনিটে সুদীপ্ত ফেইসবুকে লেখেন, “সুস্থ হোক মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীগুলো.... Get Well Soon”।
মঙ্গলবার দুপুর ৩টা ৭ মিনিটে আরেক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, “প্রজা ছাড়া রাজার দাম যেমন নেই তেমনি কর্মী ছাড়া নেতারও দাম নেই। কর্মীদের বিদ্রোহ দরকার নতুন কিছু প্রাপ্তির জন্য।।।”
গত ১ অক্টোবরের পোস্টে সুদীপ্ত লেখেন, “রাজনীতি বড়ই জটিল জিনিস...। এক সময়কার কথিত ডাস্টবিন এখন ফুলের বাগানের সৌরভ ছড়াচ্ছে। কলেজের বারান্দায় হাঁটেনি এমন পাবলিকও আজকাল মিছিল পরবর্তী সমাবেশের মঞ্চে উঠে। নোংরামি আর কত?????”
তার ১৪ সেপ্টেম্বরের পোস্টে লেখেন, “ক্ষমতাবানদের উদ্দেশ্যে… ক্ষমতা দেখিয়ে হয়ত ছোটদের উপর নির্যাতন করতে পারবেন, কিন্তু ছোটরা যদি ঘুরে দাঁড়ায় মান সম্মান হিমালয়ে যাবে…।”
“আমাদের সিনিয়ররা নিজেদের সম্পর্ক ঠিক রাখতে পারেননি। আমাদের জন্য আর কী করতে পারবেন??” ১২ সেপ্টেম্বর লিখেছিলেন তিনি।
সিটি কলেজ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ বাবলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মেরুকরণের কারণে একেকজন একেক পক্ষের অনুসারী হতে পারে। কিন্তু ক্যাম্পাসে কোনো বিভক্তি নেই।”
ফেইসবুকে সুদীপ্তর লেখালেখি এবং ব্যক্তিগত বিরোধ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইমতিয়াজ বলেন, “ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকতে পারে। ফেইসবুক পুরো ভিন্ন বিষয়। সেখানে কী লিখেছে জানি না।”
বাড়ির সামনেই মারা হয় সুদীপ্তকে
সকালে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার পর খালি গায়ে বাড়ির বাইরে বসে ছিলেন সুদীপ্ত। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর বেলা সাড়ে ১১টায় তার মৃত্যু হয়।
সুদীপ্তর মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে ও ঘুমাচ্ছিল। সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে বেশ কয়েকজন যুবক সুদীপ্তকে ডেকে দিতে পাশের বাসার এক নারীকে বলে।
“পরে তাকে ঘরের বাইরে খালি গায়ে বসা অবস্থায় পাওয়া যায়।”
নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি দল রাত ৮টার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ওই দলের সদস্য নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাড়ির গেইটের বাইরেই সুদীপ্তকে মারধর করা হয়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সংগঠনে ‘গ্রুপিং’ সব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত চালাচ্ছেন তারা।