চট্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2017, 11:03 AM
Updated : 12 Sept 2017, 02:54 PM

রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষের এমন ১৯ জনকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফটিকা ইউনিয়ন থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এর আগে রোববার সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকেও ১৮ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে টেকনাফে পাঠিয়েছিল পুলিশ। 

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারীসার্কেল) আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, হাটহাজারীর ফটিকা ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে ওই ১৯ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সিরাজুলের স্ত্রীর বাড়ি মিয়ানমারে। বেশ কয়েক বছর আগে তিন বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন।

“সে পরিচয়ের সূত্রে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ওই ১৯ জন রোহিঙ্গা তার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে।”

উদ্ধার রোহিঙ্গাদের মধ্যে ছয় পুরুষ, পাঁচ নারী ও আট শিশু রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুম বলেন, “তাদের আমরা উখিয়া বালুখালিতে অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

গত ২৪ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে বাংলাদেশ অভিমুখে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এরইমধ্যে তিন লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ।

রাখাইনে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার খবরের মধ্যে তাদের জেলাটির সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোয় রাখার উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।

উখিয়ার বালুখালীতে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগের মধ্যে চট্টগ্রামেও রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা দেখা গেল।

সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামারা এলাকা থেকে রোববার সাত নারী, দুই পুরুষ ও নয় শিশুসহ মোট ১৮ জনকে উদ্ধার করে টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল পুলিশ।

সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক জানান, রোহিঙ্গারা ঘোড়ামারা এলাকায় কামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। আমরা খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে টেকনাফ পাঠিয়ে দিয়েছি।

তিনি বলেন, “আমরা নজর রাখছি আর কোথাও কোনো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য। খবর পেলেই তাদের ধরে আমরা টেকনাফ পাঠিয়ে দেব।”

চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের বসবাস ছিল। ভিক্ষার পাশাপাশি তারা মজুরের কাজ করে জীবনযাপন করত।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আগে থেকে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বন্দর নগরীর বাসিন্দাদের।

ইতোমধ্যে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী বিভিন্ন বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৭৮ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে টেকনাফে ফেরৎ পাঠিয়েছে র্যাকব।

র্যা ব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি মিমতানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার রাতে কক্সবাজার লিঙ্ক রোডে ওইসব বাসে তল্লাশি চালিয়ে তাদের ফেরত পাঠায় কক্সবাজার র্যা ব ক্যাম্পের সদস্যরা।

এএসপি মিমতানুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামের দিকে আসা যানবাহনগুলোতে আমরা নজরদারি করছি। যাতে কোনো রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম বা অন্য কোন স্থানে চলে যেতে না পারে।

এদিকে রোহিঙ্গারা যাতে বন্দরনগরী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গারা যাতে কোনো বাড়িতে আশ্রয় নিতে না পারে সেজন্য চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলার ১৬টি থানায় লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজাউল মাসুদ।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যারা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা কক্সবাজার এলাকায় অবস্থান করবে। অন্য কোনো স্থানে যেতে পারবে না। চট্টগ্রামের কোনো বাড়িতে তাদের পাওয়া গেলেই আটক করে টেকনাফ পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এজন্য পুলিশ নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানান রেজাউল মাসুদ।

চট্টগ্রাম নগরীতেও রোহিঙ্গারা প্রবেশ ঠেকাতে নগর পুলিশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) মোখলেছুর রহমান।

তিনি বলেন, “আমরা সজাগ রয়েছি, যাতে কোনো রোহিঙ্গা নতুন করে নগরীতে প্রবেশ করতে না পারে।”

বিভিন্ন স্থানে পুলিশের করা চেকপোস্টগুলোতে রোহিঙ্গার বিষয়টি খেয়াল করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।