কোকেনকাণ্ড: চোরাচালানের মামলায়ও অধিকতর তদন্তের নির্দেশ

চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেনকাণ্ডের ঘটনায় চোরাচালানের ধারায় দায়ের করা মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2017, 06:45 AM
Updated : 7 Sept 2017, 11:06 AM

চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. শাহে নূর বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

ভোজ্যতেল ঘোষণায় তরল কোকেন আমদানির এ ঘটনায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদসহ কয়েকজনকে আসামি করে মাদক আইনে একটি মামলা করেছিল পুলিশ; পরে আদালত চোরাচালানের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয়।

চোরাচালানের মামলায় গত ১৪ মে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে নূর মোহাম্মদকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর গত ৯ অগাস্ট তাতে নারাজি জানিয়ে অধিকতর তদন্তের দাবি করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ।

এ বিষয়ে শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদালতের এ আদেশ এল।

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চোরাচালান মামলাটি অধিকতর তদন্ত করতে র‌্যাবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

“র‌্যাব-৭ এ কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।”

এর আগে মাদক আইনে করা মামলার তদন্ত শেষেও নূর মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পরে আদালতের নির্দেশে র‌্যাব তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়; সেখানে নূর মোহাম্মদকেও আসামি করা হয়।

পিপি ফখরুদ্দিন বলেন, “মাদকের মামলার তদন্ত ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে আদালত মন্তব্য করেছেন। চোরাচালান মামলাও একই পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। তিনি দুইটি প্রতিবেদন একই রকম রেখেছেন।

“পরবর্তীতে মামলাটি বিচারিক আদালতে গেলে বিচারক পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির বিষয়টি বিবেচনা করবেন।”

র‌্যাবের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক নূর মোহাম্মদের জ্ঞাতসারেই ভোজ্যতেলের মাধ্যমে তরল কোকেন আনা হয়েছিল।

চোরাচালান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন।

তারা হলেন- খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মো. মোস্তফা কামাল, আইটি বিশেষজ্ঞ মো. মেহেদী আলম, গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে এম আজাদ, যুক্তরাজ্যের নাগরিক ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। পরে পরীক্ষা করে এতে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

এরপর ২৮ জুন বন্দর থানায় নূর মোহাম্মদ ও সোহেলকে আসামি করে মাদক আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। আদালত মামলায় চোরাচালানের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয়।

২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান মাদক আইনের মামলায় আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম বাদ দেওয়ায় আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে পুলিশের বদলে র‌্যাবকে দিয়ে তদন্ত করায়।

অধিকতর তদন্ত করে গত ৩ এপ্রিল নুর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে মাদক মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন র‌্যাব-৭ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।

গত বছরের ১৫ জানুয়ারি নূর মোহাম্মদকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গত ১১ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি।

ছাড়া পাওয়ার পর নূর মোহাম্মদ গত ৬ অগাস্ট শত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে একটি মামলা করেন। তার দাবি, নিয়ম অনুসরণ না করে তার অজ্ঞাতে ভোজ্যতেলের ওই চালান আনা হয়েছিল।

নিজের প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাসহ তিন ব্যক্তি এবং শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস ও চালান পাঠানো বিদেশি কোম্পানি মিলিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ওই মামলায় বিবাদী করেছেন খান জাহান আলীর মালিক।