‘পকেট কাটা চট্টগ্রামে, নিয়ন্ত্রণ ঢাকা থেকে’

চট্টগ্রাম নগরীর ‘পকেট মার চক্র’র কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাদের নিয়ন্ত্রণকর্তাদের ঢাকায় অবস্থানের খবর পেয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2017, 02:08 PM
Updated : 19 June 2017, 02:47 PM

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের ‘পকেটমাররা’ কাজ করে মোট তিনটি গ্রুপের অধীনে। এ তিন গ্রুপের নেতৃত্ব দেন শাহাবউদ্দিন, ফারুক ও লিটন নামে তিন যুবক। আর তাদের সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করেন ঢাকার ‘পিচ্চি জামাল’।

রোববার রাতে নগরী থেকে এই তিনটি চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য মিলেছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) হুমায়ন কবির।

একটি গ্রুপের ‘নিয়ন্ত্রক’ লিটন সম্প্রতি পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও শাহাবউদ্দিন ও ফারুক এখনও পলাতক। শাহাবউদ্দিন ও ফারুক সম্পর্কে মামা-ভাগিনা বলে পুলিশ জানিয়েছে।   

ডিবি কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ডবলমুরিং থানার পোস্তারপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন গ্রুপের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরা হলেন মো. বাদশা (২৪), মো. জামাল (৩০), মো. সোহেল (২৭), মো. আলাউদ্দিন (৪২), কালু শেখ (২৬) ও মো. মুন্না (৩২)।

হুমায়ুন বলেন, “শাহাবউদ্দিন, ফারুক ও লিটন পকেটমার চক্র তিনটির নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকলেও তাদের সব কাজ তদারকি ও নির্দেশনা দেয় ঢাকার বাড্ডার মো. জামাল ওরফে পিচ্চি জামাল।

“পকেটমারদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ পিচ্চি জামালকে দিতে হয়। তার সহযোগী সোহেল এ লেনদেন সমন্বয় করে।”   

গণপরিবহন ও কোলাহলপূর্ণ জায়গায় অফিস ছুটির সময়ে এই পকেটমার চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ন বলেন, “দিনের অন্য সময়ের তুলনায় বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নগরীর ইপিজেড থেকে নিউ মার্কেট এলাকার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ‘পকেট কাটার’ কাজ করে তারা। বেশিরভাগ সময় তাদের নজর থাকে মোবাইলের দিকে।”

এদের কেউ গ্রেপ্তার হলে জামাল তাদের টাকা-পয়সা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন বলে জানান হুমায়ুন।

গ্রেপ্তার পকেটমার চক্রের তিন সদস্য

তার সহযোগী সোহেল প্রতি শুক্র ও শনিবার চট্টগ্রামে এসে ভাগের টাকা নিয়ে যায় বলে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পুলিশকে জানিয়েছেন।

বাদশা ও মো. জামাল জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা গ্রেপ্তার হলে জামিনের ব্যবস্থা করতে নির্দিষ্ট কিছু আইনজীবী আছেন। 

ওই আইনজীবীরা টাকা-পয়সা ছাড়াই তাদের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে জামিনের ব্যবস্থা করেন। পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে নতুন কাজ করে (পকেট কাটা) আইনজীবীর জামিনের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেন তারা।

‘বকেয়া ফি’ পরিশোধের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হারে টাকা ওই আইনজীবীদের দিতে হয় বলেও পুলিশের কাছে দাবি করেন পকেটমার চক্রের সদস্যরা।

যেভাবে কাটা হয় পকেট

বিভিন্ন গণপরিবহনের পাশাপাশি এই চক্রের সদস্যরা সভা-সমাবেশ এবং মাজারের ওরশ শরীফেও সাধারণ মানুষের পকেট কাটেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

অফিস ছুটির সময় নিউ মার্কেটের মতো এলাকাগুলোতে তৎপরতা বাড়ে পকেটমারদের

গ্রেপ্তার ছয়জনের একজন বাদশা জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, যে কোনো বাসে তারা একসঙ্গে ছয় থেকে সাতজন উঠেন। দলের সদস্যরা একে অন্যের কাছে ‘মিস্ত্রী’, ‘ঠেকবাজ’ ও ‘পাচারকারী’ ছাড়াও বিভিন্ন সাংকেতিক নামে পরিচিত।

‘ঠেকবাজ’ টার্গেট হিসেবে ঠিক করা ব্যক্তিকে ভিড়ের মধ্যে আগলে রাখেন বা ধাক্কা দিয়ে অন্যমনস্ক করে ফেলেন। তখন ‘মিস্ত্রী’ টার্গেটের পকেট থেকে মোবাইল বা মানিব্যাগ নিয়ে অন্যদের দিয়ে দেন।

বাকি সদস্যরা চক্রের কেউ ধরা পড়ে গেলে তাকে ছাড়িয়ে নিতে সাধারণ যাত্রীর বেশে গাড়িতে উঠেন।  

বাদশা জানান, প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচজন ব্যক্তির পকেট কাটেন তারা। চুরি করা মোবাইল ফোন সেটগুলো তারা রেয়াজ উদ্দিন বাজারের তামাকমুন্ডি লেইনের বিভিন্ন মোবাইলের দোকানে বিক্রি করেন।

এভাবে প্রতিমাসে দলের প্রত্যেক সদস্যের গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয় বলে জানান বাদশা।