পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামে ১০ উপজেলায় ক্ষতি

ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদীর তীর উপচে লোকালয় ও সড়কে চলে আসা পানিতে চট্টগ্রামের ১০টি উপজেলার জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 04:17 PM
Updated : 13 June 2017, 04:17 PM

পটিয়া, চন্দনাইশ, রাউজান, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে।আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও লোহাগাড়া উপজেলায়ও পানিতে ঘরবাড়ি ও সড়ক তলিয়েছে।

সোমবার রাত থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠতে শুরু করে।

শঙ্খ ও ঢলু নদী বেয়ে নেমে আসা পানি স্থানীয় খাল-নালা বেয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে উঠে আসে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের পটিয়া, দোহাজারী, চন্দনাইশ, সতকানিয়ার বড় দুয়ারা অংশে রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গেসঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া অংশ থেকে পানি নামতে শুরু করে।

পটিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শ্রীমাই খাল সংলগ্ন কেলিশহর হাইদগাও, ভাটিখাইন, আশিয়া ও ছনহরা ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

খালের পানি লোকালয়ে প্রবেশের কারণ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, পটিয়ায় ৩৯টি সেতুর কাজ চলছে। সেতুর জন্য দেওয়া অস্থায়ী বাঁধগুলোতে ঢলের পানি আটকে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।

“৬৭৫টি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। দুই থেকে তিনশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ক্ষতি হয়েছে পোল্ট্রিরও।”

পটিয়া সদরের রামকৃষ্ণ মিশন রোড, স্টেশন রোড, থানা হাট, আদালত সড়ক, ডাক বাংলার মোড়সহ বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হয়।

চন্দনাইশ উপজেলার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাশিমপুর, বড়মা, বৈলতলী, ধোপাছড়ি, দোহাজারী এলাকায় এবং পৌরসভার ৫,৭,৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

“মহাসড়কের দোহাজারি পাঠানিপুল অংশে এখনো সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তাই যান চলাচল বন্ধ আছে।”

শঙ্খ নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার বেশিরভাগ পুকুরের মাছও বেশি গেছে বলে জানান জব্বার চৌধুরী।

সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, নলুয়া, আমিলাইশ, চরতি ও কেওচিয়া ইউনিয়নেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলার দক্ষিণ অংশে খানখানাবাদ, ছনুয়া, বাহারছড়া, সরল, কাতারিয়া, শেখেরখিল ও ছনুয়া ইউনিয়নে বেশকিছু এলাকায় সাগর থেকে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে।

জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাঁশখালীর মোশারফ আলী হাট সড়ক, শেখেরখিল-ছনুয়া সড়ক ও সাধনপুর এলাকার মূল সড়ক।

এছাড়া আনোয়ারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম বাড়ৈ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রায়পুর ইউনিয়নে পানি আছে। মূল সড়কে পানি ওঠেনি। তবে ইউনিয়ন এলাকার সড়কগুলো প্লাবিত হয়েছে।

বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের ভান্ডারজুরি খালে ভাঙনের কারণে ১২টি ঘর বিলীন হয়েছে।

উত্তরেও পানি

দক্ষিণ চট্টগ্রামের মতো উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান উপজেলায়ও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

মঙ্গলবার রাতে রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বাড়িতে ফেরার সময় পানিতে পড়ে তিনজন নিখোঁজ হন।

হলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জলিল, তার এক ছেলে ও বাতেন নামে তিনজন পানিতে পড়ে গেছে। তাদের খোঁজ চললেও সন্ধান মেলেনি এখনও।

এরআগে মঙ্গলবার সকাল থেকে পানিতে পড়ে হলদিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নয়ম (১৫) এবং সাবের (২০) নামের দু’জন নিখোঁজ আছেন বলে জানান শফিকুল।

রাউজানের উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, পানির কারণে চিকদারই ও নওয়াজিশপুর ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উপজেলার ৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম-রাঙামাটির সড়কের রাউজান উপজেলার নোয়ারাস্তা এলাকায় কোমর সমান পানি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ফটিকছড়ির উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হালদা নদী এবং ধুরং, লুলং ও সত্তার খালের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশের কারণে ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সবগুলো সড়ক তলিয়ে গেড়ছে।

“বৃষ্টি আর না হলে আগামীকাল (বুধবার) পানি সরতে পারে।”

উপজেলায় ৩২০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইউএনও জানান।

পাশের হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলী জানান, ধলই ইউনিয়নে খালের বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকেছে। সেটি মেরামতের কাজ চলছে। এছাড়া কয়েকটি গ্রামে পানি আছে।