বাঁধ সরিয়ে মহেশখালে স্লুইস গেট হবে

জনদুর্ভোগ বিবেচনা করে মহেশখালের অস্থায়ী বাঁধটি দ্রুত অপসারণ করে খালের মুখের কাছে স্থায়ী স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2017, 12:22 PM
Updated : 1 June 2017, 12:22 PM

বৃহস্পতিবার নগর ভবনে এ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।

আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, “বন্দর আমাদের অনুরোধেই অস্থায়ী স্লুইস গেট নির্মাণ করেছিল। একটা ভাগের মানুষ সুফলও পেয়েছে।

“কিন্তু গতকাল অতিবর্ষণের কারণে পূর্ব-পশ্চিম উভয় অংশের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ১৮-২০ ঘণ্টায়ও পানি নামেনি।”

মেয়র নাছির বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ খালের মুখের দিকে স্থায়ী স্লুইস গেট নির্মাণ করবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বন্দর নতুন স্লুইস গেটের টেন্ডার এ যাবে।

“জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে অস্থায়ী স্লুইস গেটটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি আমাদের অপসারণ করতে বলা হয় আমরা তা করব।”

নাছির বলেন, স্থায়ী স্লুইস গেট নির্মাণে ১৮ মাসের মতো সময় লাগতে পারে। তাই অস্থায়ী স্লুইস গেট অপসারণ হলে ভরা জোয়ারে আগামী বর্ষায়ও সমস্যা হতে পারে। পরের বর্ষায় আর সমস্যা হবে না।

“এর মধ্যে মহেশখালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন খনন করবে। পোর্ট কানেকটিং সড়ক ও আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক সংলগ্ন নালাসহ সংস্কার করা হবে। আশা করি এর সুফল মানুষ পাবে।”

মহেশখালের অস্থায়ী বাঁধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সভায় গত ২৪ মার্চ মেয়র, স্থানীয় সাংসদ এম এ লতিফ এবং বন্দর পর্ষদ সদস্য (প্রকৌশল) জুলফিকার আজিজের সমন্বয়ে একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সেই কমিটি গত দুমাসে কোনো বৈঠক করেনি। জলাবদ্ধতায় নগরজীব যখন দুর্বিষহ তখন বৃহস্পতিবার সকালে নগরভবনে কমিটি প্রথমবারের মত বৈঠকে বসে।

বৈঠক শেষে কমডোর জুলফিকার আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত বোর্ডকে (বন্দর পর্ষদ) জানাব। জরুরিভাবে যাতে উদ্যোগ নেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করা হবে।

বৈঠকে জুলফিকার আজিজ বলেন, “মহেশখালীর মুখে কুমারখালী রেলসেতুর পরে স্থায়ী স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (চুয়েট) দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এটি টেন্ডারে চলে যাবে।”

বৈঠকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম সামছুল করিম খালে স্থায়ী স্লুইস গেট নিমার্ণের একটি মডেল উপস্থাপন করেন।

যত কষ্ট বাঁধেই

ঘুর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে মঙ্গলবার রাতে ভারি বর্ষণের পর বুধবার ডুবে যায় নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, গোসাইলডাঙ্গা, আগ্রবাদ এক্সেস সড়ক, পোর্ট কানেকটিং সড়ক, হাজী পাড়া, বেপারী পাড়া, শান্তিবাগ এবং হালিশহর আবাসিক এলাকার বিভিন্ন সড়ক।

বুধবার জলাবদ্ধতার পর মহেশখালের স্লুইস গেট খুলে দিলেও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নগরীর সিডিএ আবাসিক এলাকা এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক ও আশেপাশের এলাকা থেকে পানি নামেনি।

এরজন্য স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি এবং মেয়র সবাই দায়ী করেছেন মহেশখালের সেই অস্থায়ী স্লুইস গেটকে।

মহেশখালের বন্দর রিপাবলিক ক্লাব সংলগ্ন অংশে ২০১৫ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামের নগর পরিকল্পনাবিদদের বিরোধীতা উপেক্ষা করেই বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাবিবুল হক বলেন, পাঁচ লাখ লোক পানির নিচে ছিল গতকাল। মেয়রের কাছে যন্ত্রপাতি চেয়ে নিয়ে বাঁধের কাছে গেলেও বন্দর চেয়ারম্যানের অনুমতি না পাওয়ায় বাঁধ খুলতে পারিনি।

“পরে দুটি পাইপের মুখ থেকে বড় বড় ১৫টি পাথর সরাই। ডাইভারশানের মুখ খুলে দিই। বাঁধের উজানে শীতে শুধু আর্বজনা আর মশার চারণভূমি। এখনই এ বাঁধ অপসারণ করুন।”

৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউল আলম বলেন, বাঁধের অসুবিধা নিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়ে গেছি। যদি জোয়ার থাকত সবাই ডুবে যেতমা। দ্রুত এ বাঁধ অপসারণ করা হোক।

বাঁধ নির্মাণের পর থেকেই এর উজানের ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা, ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর এবং ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের বাসিন্দারা এর বিরোধীতা করে আসছেন।

গত বছরের ২১ মে বাঁধ খুলে দিতে গেলে স্থানীয়দের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের পর সেখানে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়।

বুধবারও যখন বাঁধের উজানে বিস্তৃণ এলাকা ডুবন্ত তখনও সেখানে ছিল পুলিশ প্রহরা।