হাসপাতালে হাঁটু পানি

টানা বর্ষণে চট্টগ্রামের ‘মা ও শিশু হাসপাতাল’ তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও রোগীর স্বজনদের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোমোস্তফা ইউসুফবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2017, 12:52 PM
Updated : 31 May 2017, 04:19 PM

মঙ্গলবার রাতভর বর্ষণে হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় বুধবার ৬৫০ শয্যার এ হাসপাতালের নিচতলার সব রোগীকে চতুর্থ তলায় সরিয়ে নেওয়া হয়।

ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলজট; অনেক জায়গায় নৌকা নিয়েও চলাচল করতে দেখা গেছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২২৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।

আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, পানিতে তলিয়ে গেছে হাসপাতালের নিচতলা। জরুরি বিভাগ, অভ্যর্থনা বিভাগ, টিকেট কাউন্টার, লিফট রুম, বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ ও এবাদতখানা পানির নিচে।

হাসপাতালের আশেপাশের এলাকাও ডুবে গেছে পানিতে। কোমর সমান পানি ভেঙে রিকশায় রোগীদের আসতে দেখা গেছে। শিশুকে নৌকায় তুলেও হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন কেউ কেউ।

নগরীর পতেঙ্গা থেকে হাসপাতালে আসা রোজিনা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিজের বাচ্চার শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা করাতে তিন দিন আগে ভর্তি করেছিলেন হাসপাতালে।

“জরুরি দরকারে হাসপাতাল থেকে বের হতে গিয়ে কাপড়-চোপড় ভিজে যাচ্ছে, বাচ্চার সমস্যাও আরও বাড়ছে।”

হাসপাতালে প্রবেশ পথে অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারীকে দেখা গেছে সংকটাপন্ন রোগীদের নাম নিবন্ধন করতে।

হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী সরওয়ার আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ১২টা থেকে হাসপাতালের নিচতলা পানির নিচে। অনেক কষ্টে আমরা নিচতলার রোগীদের উপরে নিযে গেছি।

“ভারি বর্ষণ হতে না হতে পানির নিচে তলিয়ে যায় এ হাসপাতাল। বর্ষায় এ সমস্যার মধ্যে থাকতে হয় আমাদের।”

কষ্ট করে এসেও চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ফিরেও যেতে হয়েছে কয়েকজন রোগীকে।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে অসুস্থ ছোটবোনকে নিয়ে আসা পাপড়ি আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক দূর থেকে এসেছি। আধা কিলোমিটার পথ আসতে রিকশায় নিয়েছে ৫০ টাকা। হাঁটু সমান পানিতে কোনো ডাক্তারও পেলাম না। অন্য কোথাও ডাক্তার দেখাব, তাই চলে যাচ্ছি।

হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান সৈয়দ মোরশেদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে জলাবদ্ধতা সমস্যায় ভুগছেন তারা। গত দুই বছরের হাসপাতালের চারপাশ দুই ফুট উঁচু করেও মুক্তি মিলছে না।

“রাত থেকে ৪৫ জন রোগীকে আমরা চতুর্থ তলায় স্থানান্তর করেছি। একমাত্র সমাধান হচ্ছে হাসপাতালে নিচতলা আর ব্যবহার না করা।”

আগামী বছর হাসপাতালের আরেকটি ভবন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেটি হয়ে গেলে আমরা সেখানে চলে যাব।”

সৈয়দ মোরশেদ বলেন, “এভাবে আমরা হাসপাতালকে হয়ত পানি থেকে মুক্ত রাখতে পারব কিন্তু পুরো এলাকা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে হলে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা নিতে হবে।”

শুধু ‘মা ও শিশু হাসপাতাল’ নয়, গত রাত থেকে টানা বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে আগ্রাবাদের ছোট পুল, বড় পুল, হাজী পাড়া, বেপারি পাড়া, দাইয়া পাড়া, কুসুমবাগ আবাসিক এলাকাসহ প্রায় অধিকাংশ এলাকা।