কোকেন মামলা: চোরাচালানের অভিযোগপত্রেও নুর মোহাম্মদ বাদ

চট্টগ্রাম বন্দরে ভোজ্যতেল ঘোষণায় তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় মাদকের মতো চোরাচালান মামলায়ও নুর মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2017, 11:26 AM
Updated : 14 May 2017, 12:43 PM

কোকেন যে সূর্যমুখী তেলের মধ্যে মিশিয়ে আনা হয়েছিল, সেই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নুর মোহাম্মদ এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন।

২০১৫ সালে কোকেন পাওয়ার পর মাদক ও চোরাচালানের অভিযোগে দুটি মামলা হয়। মাদক মামলায় পুলিশ তদন্ত করে নুর মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দিলেও পরে র‌্যাবের তদন্তে তাকে আসামি করা হয়।

রোববার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাসুদ পারভেজের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান যে অভিযোগপত্র দেন, তাতেও নুর মোহাম্মদকে বাদ রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম আদালত পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আটজনকে অভিযুক্ত করে চোরাচালান মামলাটিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদদের নাম আটজনের মধ্যে নেই বলে জানান তিনি।

নির্মলেন্দু চক্রবর্তী বলেন, অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে সোমবার আদালতে শুনানি হবে।

চোরাচালান মামলার অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন- খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মো. মোস্তফা কামাল, আইটি বিশেষজ্ঞ মো. মেহেদী আলম, গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী  আতিকুর রহমান, সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন)  এ কে এম আজাদ, যুক্তরাজ্যের নাগরিক ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া।

এদের মধ্যে ফজলুর ও বকুল মিয়া পলাতক।

অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে ৫৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

এই কন্টেইনারের একটিতে সূর্যমুখী তেলের মধ্যে তরল কোকেন পাওয়া গেছে

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। পরে পরীক্ষা করে এতে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।   

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বলিভিয়া থেকে আমদানি করা সূর্যমুখী ভোজ্যতেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয়েছিল উরুগুয়ের মন্টিভিডিও বন্দরে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ওই বছরের ১২ মে কনটেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।

এরপর ২৮ জুন বন্দর থানায় নুর মোহাম্মদ ও সোহেলকে আসামি করে মাদক আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। আদালত মামলায় চোরাচালানের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয়।

২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান মাদক আইনের মামলায় আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম বাদ দেওয়ায় আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে পুলিশের বদলে র‌্যাবকে দিয়ে তদন্ত করায়।

অধিকতর তদন্ত করে গত ৩ এপ্রিল নুর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে মাদক মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন র‌্যাব-৭ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।

তাতে বলা হয়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক নুর মোহাম্মদের জ্ঞাতসারেই ভোজ্যতেলের মাধ্যমে তরল কোকেন আনা হয়েছিল।   

বাংলাদেশে এভাবে কোকেন আনার ঘটনা এটাই প্রথম বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই কোকেন ভারতে যাচ্ছিল বলে তাদের ধারণা।