শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় তিনি বলেন, “ক্ষমতা বেশিদিন থাকে না।
“অনুরোধ করি ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। এটা আমানত। টাকা-পয়সা বেশিদিন থাকবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকা পয়সা নিয়ে দেশে থাকতে পারবেন না।”
ভুল স্বীকার করে সংশোধন করতেও নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
“নেতা হিসেবে আমার ভুল হতে পারে। প্রত্যেকে ভুল করে। আমি যদি মনে করি আমি যা করি সব ঠিক তাহলে দলও ডুববে, নিজেও ডুববেন। আমারও ভুল হয়। আমিও সংশোধন করি।”
দলে নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “পকেট ভারী করার জন্য খারাপ লোকদের দলে টানবেন না। দুঃসময় আসলে তাদের হাজার পাওয়ারের বাতি দিয়ে খুঁজে পাবেন না।”
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় প্রতিনিধি সভায় দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানস্থলে দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসহাক মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও সাবিহা মুছা, কেন্দ্রীয় নেতা মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন মঞ্চে থাকলেও তারা বক্তব্য রাখেননি।
মঞ্চে মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির প্রায় সবক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সহ-সভাপতি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং আফসারুল আমীন প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আ জ ম নাছির এক পর্যায়ে মঞ্চে উপস্থিত বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফের নাম বললে কয়েকজন প্রতিনিধি হৈ চৈ করতে থাকেন।
প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রাম মহানগরের অধীন বিভিন্ন থানা কমিটির নেতারা দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত করা, অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ, এলাকার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব কমানোর দাবি তোলেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কাকে কোথায় নমিনেশন দেওয়া হবে, কোনো ঠিক নেই। আমাকেও না দিতে পারে। যাকেই নৌকা প্রতীকে ইলেকশন করতে দেওয়া হবে, তার সাথে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।”
কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “তৃতীয়বারের মতো দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। নিজেদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকলে তা আলোচনার টেবিলেই সমাধান করতে হবে।”
প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়াম লীগের অধীন ১৫ থানা ও ৪৪টি ওয়ার্ডসহ মিলিয়ে আটশ’র মতো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে দলের এক নেতা জানিয়েছেন।
বিএনপি ‘নালিশ পার্টি’
প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে ‘নালিশ পার্টি’ আখ্যায়িত করেন।
“বিএনপি এখন খালি প্রেস ব্রিফিংয়ে ভাঙা রেকর্ড বাজায়। তারা এখন নালিশ পার্টি। একের পর এক তারা নালিশ করে যাচ্ছে, কখনও মিডিয়ায়, কখনও বিদেশিদের কাছে।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “কৌশল-অপকৌশল যতই করুন শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে রাজনৈতিক দাবা খেলায় আপনারা (বিএনপি) হেরে গেছেন। কোনো কৌশল করে আগামী নির্বাচনে আপনারা জিততে পারবেন না।”
ভারত নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “ভারত আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু এটা স্বীকার করি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সবসময় দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বন্ধুত্ব করে।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ বিএনপিকে ‘পাকিস্তানের এজেন্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে তাদের এজেন্ট হিসেবে জিয়াউর রহমান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ক্ষমতায় এসে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের পুনর্বাসন করে পাকিস্তানি ভাবধারা প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। খালেদা জিয়াও পরবর্তীতে একই কাজ করেছেন।”
হেফাজতের সঙ্গে ‘চুক্তি হয়নি’
ওবায়দুল কাদের বলেন, কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো চুক্তি হয়নি।
“তাদের সাথে আমরা কোনো চুক্তি করিনি। তাদের মূল ধারায় আনতে স্বীকৃতি দিয়েছি। স্বীকৃতি আর এলায়েন্সের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”
হেফাজতকে নিয়ে বিএনপি ষড়যন্ত্র করেছিল বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
“তারা হেফাজতকে নিয়ে আগামী ৫ মে আরেকটা শাপলা চত্বর বানানোর খায়েশ ছিল। তা আপাতত চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। শফী হুজুর নিজেও তো এখন বলেন ‘জঙ্গিবাদ ইসলামের শত্রু’।”