চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি রক্ষায় ‘স্মৃতি ফলক’

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি রক্ষায় পাহাড়তলির ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাবে একটি ‘স্মৃতি ফলক’ স্থাপন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2017, 02:16 PM
Updated : 19 April 2017, 02:16 PM

বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবদুল হাই ‘চট্টগ্রাম বিপ্লব ও বিপ্লবী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’ স্থাপিত স্মৃতি ফলকটি উন্মোচন করেন।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে তখনকার ইউরোপিয়ান ক্লাবে বিপ্লবীরা হামলা চালায়। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবসের ৮৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হলো।

ক্লাবটি বর্তমানে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্মৃতি ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জিএম আবদুল হাই বলেন, কয়েকজন ইতিহাস সচেতন তরুণের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমাদেরই উচিত ছিল আরও আগেই চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া।

“ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পথ বেয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই উজ্জ্বল ইতিহাস সারা দেশের মানুষকে জানাতে হবে। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি রক্ষায় রেলওয়েও নিজস্ব কিছু উদ্যোগ অবিলম্বে গ্রহণ করবে।”

‘স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’ এর নেওয়া উদ্যোগেও সহায়তা করা হবে বলে জানান আবদুল হাই।

পরিষদের উপদেষ্টা ইতিহাস গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হক বলেন, অত্যন্ত কঠিন সময়ে চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন।

“তারা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন। আমাদের ইতিহাস সচেতন হতে হবে। তা না হলে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে না কত ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীন বাংলাদেশ।”

পরিষদের আহ্বায়ক আলমগীর সবুজ বলেন, ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। এত বছর পেরিয়েও অনেকে জানেন না ইউরোপিয়ান ক্লাবটি কোথায়

“ভারতে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি রক্ষায় অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অথচ আমাদের এখানে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।”

ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনের সড়কসহ আশপাশের এলাকাকে ‘প্রীতিলতা চত্বর’ ঘোষণার দাবি জানান আলমগীর সবুজ।

স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য প্রীতম দাশ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজদের বিনোদনের ক্লাব হিসেবে ব্যবহার করা ইউরোপিয়ান ক্লাবে লেখা থাকতো ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ’।  

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সব অহঙ্কার চূর্ণ করে চার দিন স্বাধীন ছিল চট্টগ্রাম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নি পুরুষ মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশে পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব পান বীর কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১৫ জন বিপ্লবীর একটি দল ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণ চালায়।

প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণের নির্দেশ দেন। গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে উঠেছিল সেদিন। ইংরেজ কর্মকর্তারা রিভলবার দিয়ে পাল্টা গুলি চালায়।

ওই হামলায় এক ইংরেজ নিহত এবং ১১ জন আহত হন। এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন প্রীতিলতা। পরে গ্রেপ্তার এড়াতে পটাশিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম এই নারী শহীদ।   

নতুন স্থাপন করা স্মৃতি ফলকটিতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের ইতিহাস সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে।