বর্ষবরণের ‘দেয়ালচিত্র’ মুছে দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মৌলবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতাকে ব্যর্থ করে দিয়ে নগরবাসী মেতেছে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ উদযাপনে।
পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনকে ‘হিন্দুয়ানি’ বলে সম্প্রতি মুসলিম মৌলবাদীদের প্রচারণার মধ্যে জনদুর্ভোগের কারণ দেখিয়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা বাতিল করায় প্রগতিমনা মানুষের মধ্যে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার ছাপ চট্টগ্রামেও পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গল শোভাযাত্রার পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বললেও, হেফাজতে ইসলামের চাপে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য অপসারণের দাবি মানার পর দলের শোভাযাত্রা বাতিল করায় সেই শঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে।
তিনি বলেন, “একটি কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হচ্ছে। আঁধারের অপশক্তির কোনো জায়গা নেই বাঙালিদের।”
অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
গেল বছরের গ্লানি ও জীর্ণতা ভুলে নতুনের আবাহনে পহেলা বৈশাখ বরণে প্রতিবারের মতোই চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রার পাশাপাশি নববর্ষ বরণের মূল দুই আয়োজন ডিসি হিল ও সিআরবি শিরিষ তলায়।
শোভাযাত্রায় চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ছিল স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। ঢোল বাজিয়ে নানা রকমের টেপা পুতুল, মুখোশ নিয়ে সবাই আনন্দে মেতে ছিল শোভাযাত্রায়।
বর্ষ বরণের আয়োজনের জন্য আঁকা দেয়ালচিত্র পোড়া মবিল দিয়ে মুছে দেওয়ার পরও কোনো কমতি ছিল না এ আয়োজনে। নতুন করে আবার দেয়ালে এঁকেছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ডিসি হিলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে ‘সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ।’
সিআরবি শিরিষ তলার নববর্ষ আয়োজনের অনুষ্ঠান শুরু হয় ‘ভায়োলিনিস্ট চিটাগাং’ নামে একটি সংগঠনের দলীয় বেহেলার সুরে।
রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করে নগরবাসী ছুটছে ডিসি হিল ও সিআরবি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। সব জীর্ণতা ও বাঁধা ডিঙে সব বয়সীরা মেতে উঠেছে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে। নেচে গেয়ে মুখে রঙ লাগিয়ে নানা রঙে সেজে ভেদাভেদ ভুলে একে অন্যের সাথে মেতে উঠেছে উৎসব আনন্দে।
এ দুটি বড় অনুষ্ঠান ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে আলাদা করে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও মেতে উঠেছে আনন্দ উৎসবে; রয়েছে গ্রামীণ মেলা, লোকগীতি, বাউল গান, আদিবাসী ঐতিহ্য উপস্থাপন, বলী খেলা, সাপখেলা পুতুল নাচসহ নানা আয়োজন।
এদিকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে নগর জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিকাল ৫টার মধ্যে বর্ষবরণের সকল অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য আহবান জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।