ধরে নেওয়া ছাত্রদল নেতার হাত-মুখ বাঁধা লাশ

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক নেতার লাশ পাওয়া গেছে, তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে হত্যা করেছে বলে বিএনপির অভিযোগ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2017, 10:59 AM
Updated : 30 March 2017, 06:55 PM

নিহত নুরুল আলম নুরু কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাসা চট্টগ্রাম নগরীর চন্দনপুরায়।

বুধবার রাত ১২টার দিকে বাসা থেকে তাকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে স্বজনদের দাবি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান এলাকায় কর্ণফুলী নদীর পাড়ে নুরুর লাশটি পাওয়ার কথা পুলিশ জানায়।

রাউজান থানার এসআই নুরুন্নবী ঘটনাস্থল থেকে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে বেলা পৌনে ২টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে যান।

“তার হাত রশি দিয়ে ও মুখ ওড়না দিয়ে বাঁধা। শরীরের মাথা ও মুখের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে।”

নুরুর ভাগ্নে রাশেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ১২টার দিকে ছয় থেকে সাতজন সাদা পোশাকে এবং দুই-তিনজন জেলা পুলিশের পোশাক পরা লোক এসে নুরুকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়।”

যারা ধরে নিয়েছিল, তারা কোনো কথা বলেনি বলে জানান তিনি।

রাশেদুলের দাবি, সাদা পোশাকে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদবীর একজন কর্মকর্তাকে তারা চিনতে পেরেছেন।

বুধবার রাতে তুলে নেওয়ার পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন ছাত্রদল নেতাকে দলীয় নেতা নুরুর ছবি দিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিতেও দেখা গেছে।

পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে এসআই নুরুন্নবী বলেন, “পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে। তারা এখনও এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেনি।”

বুধবার রাতে রাউজান থানা পুলিশের কোনো অভিযান ছিল না বলেও জানান থানার সেকেন্ড অফিসারের দায়িত্বে থাকা নুরুন্নবী।

এদিকে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নুরুকে পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, “গতকাল (বুধবার) তার পরিবারের সদস্যরা দেখেছে, প্রকাশ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে।

“এটা শুধু না, এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। কিন্তু একটি সাধারণ চিত্র হচ্ছে, পরিবারের লোকেরা দেখছে, প্রতিবেশীরা দেখছেন, আশ-পাশের লোকেরা দেখছেন, ছেলেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।”

ছাত্রদলের প্রতিবাদ কর্মসূচি

কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম নুরু হত্যার প্রতিবাদে রোববার সব জেলা-মহানগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে ছাত্রদল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় নয়া পল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রিয় সহযোদ্ধা নুরুল আলম নুরুর পরিবার আমাদের নিশ্চিত করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গতকাল রাতে রাউজান থানার সাব ইন্সপেক্টর জাবেদের নেতৃত্বে তাকে তুলে নিয়ে যায়। ভোর রাতে তার মাথায় ১০টি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগে ছাত্রদল যে কর্মসূচি দেবে, তাও বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান রাজীব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ ছাত্রদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে নুরু হত্যার প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদল।