সীতাকুণ্ডে দুটি জঙ্গি আস্তানায় গত সপ্তাহে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে নিহত পাঁচজনের মধ্যে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় অন্তত দুজন। আস্তানা থেকে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় বোমাও উদ্ধার করা হয়।
তার পরপরই শুক্রবার ঢাকার আশকোনায় র্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান আরেক জঙ্গি।
আত্মঘাতী ওই ব্যক্তির বিস্ফোরকের সঙ্গে সীতাকুণ্ডে উদ্ধার বোমার মিল পাওয়ার তথ্য জানিয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রাম থেকে বোমাগুলো নেওয়া হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তারা।
তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুমিল্লায় পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপকারীদের কাছ থেকে এবং সীতাকুণ্ডে উদ্ধার হওয়া বোমাগুলোর মধ্যে মিল রয়েছে।
“ঢাকায় র্যাব ব্যারাকের বোমাগুলোও কুমিল্লা ও সীতাকুণ্ডে উদ্ধার হওয়ার বোমাগুলোর মতোই।”
গত ৭ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনায় পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপকারী হাসান ও ইমতিয়াজ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন, তারা বোমাগুলো চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন।
তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে প্রথমে মিরসরাইয়ে অভিযান চালানো হয়। এরপর অভিযান হয় সীতাকুণ্ডে।
সীতাকুণ্ডে নিহত দুজন নব্য জেএমবির বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলে পুলিশের ধারণা; মিরসরাইয়ের আস্তানায় বোমা তৈরি হত বলেও তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ডিআইজি শফিকুল বলেন, “তারা বোমাগুলো চট্টগ্রামে বানিয়ে ঢাকায় পাঠাচ্ছিল। তা যদি হয়; তাহলে বোঝা যাচ্ছে ঢাকায় ব্যবহারের জন্য তারা বোমাগুলো নিয়ে গিয়েছিল।”
গত বছর গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে বেশ কয়েকজন নেতা মারা যাওয়ার পর জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড স্তিমিত হয়ে আসছিল।
কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ধরা পড়ার পর জঙ্গিরা তাদের অস্তিত্বের জানান দিতেই র্যাব ব্যারাকে হামলা চালায় বলে ধারণা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “পুলিশের চেয়েও কিছু কিছু দিকে র্যাব সদস্যরা অনেক বেশি প্রশিক্ষিত। জঙ্গিদের ধারণা র্যাবের উপর কোনো হামলা করতে পারলে পুলিশ সদস্যরা কিছুটা ভয়ে পেতে পারে। সেই ধারণা থেকেই র্যাব ব্যারাকে হামলা হয়।”
‘অল্প অল্প করে সরঞ্জাম সংগ্রহ’
এক সঙ্গে বেশি সরঞ্জাম সংগ্রহ না করে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করে সীতাকুণ্ডের আস্তানায় জঙ্গিরা বোমা তৈরি করছিল বলে জানান ডিআইজি শফিকুল ইসলাম।
প্রেমতলার ‘ছায়ানীড়ে’ আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে বেশকিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
ডিআইজি শফিকুল বলেন, “ছায়নীড়ের বাসা থেকে বেশকিছু দোকানের নাম পাওয়া গেছে। যেসব দোকান থেকে তারা বিস্ফোরকের বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে।
“কেউ যাতে সন্দেহ না করে, সেজন্য অল্প অল্প করে এসব সংগ্রহ করা হয়েছে। যেসব দোকানের নাম পাওয়া গেছে, সেগুলোতে আদৌ এগুলো বিক্রি হয় কি না এবং কীভাবে সেগুলো সংগ্রহ করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
‘নিরাপদ ভেবে চট্টগ্রামে ঘাঁটি’
ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা নিরাপদ ভেবে চট্টগ্রামে আস্তানা গেঁড়েছিল বলে মনে করেন ডিআইজি শফিকুল।
তিনি বলেন, “ঢাকায় পুলিশের বেশ কিছু সফল অভিযান হয়েছে। সেকারণে ওরা আর ঢাকাকে নিরাপদ মনে করছে না। সে কারণেই তারা বিস্ফোরক চট্টগ্রাম থেকে বানিয়ে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছিল।”
এর আগে গ্রেপ্তার জঙ্গিনেতাদের অধিকাংশ উত্তরাঞ্চলের হলেও এবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দা পাওয়ায় তাও ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
সীতাকুণ্ডের প্রেমতলার ‘ছায়ানীড়ে’ আত্মঘাতী কামাল ও তার স্ত্রী জোবায়দা পাশের এলাকা আমিরাবাদের ‘সাধনা কুঠির’ থেকে গ্রেপ্তার জঙ্গি জসিমের বোন ও দুলাভাই বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছে পুলিশ।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নে তাদের বাড়ি।
একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়ে ডিআইজি শফিকুল বলেন, “অভিযানের পর তাদের সদস্য সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য তারা এখন চেষ্টা করছে যে একজন জঙ্গি হয়েছে তার পরিবারের বাকি সব সদস্যকে এ পথে নিয়ে আসার।”