বাসা ভাড়া নেওয়া হয় ‘শালা-দুলাভাই’ পরিচয়ে

সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার প্রেমতলায় ‘ছায়ানীড়’ নামের যে ভবনে আস্তানা গেড়েছিল জঙ্গিরা, ওই বাসা মাসখানেক আগে ‘শালা-দুলাভাই’ পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন দুই ব্যক্তি।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী সীতাকুণ্ড থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2017, 10:18 AM
Updated : 16 March 2017, 10:25 AM

দোতলা ওই বাড়ি ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টার অভিযানের সমাপ্তি হয় বৃহস্পতিবার সকালে, আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ চার ‘জঙ্গির’ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। 

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সফিকুল ইসলাম বলছেন, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ওই বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বিস্ফোরকের মজুদ গড়ে তুলেছিল। পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল সেগুলো নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করছে।

অভিযানে জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সারারাত আতঙ্কের মধ্যে ওই বাড়িতে কাটানো কয়েকটি পরিবারের ২০ সদস্যকে উদ্ধার করে সকালে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে।

দ্বিতল ছায়ানীড়ের প্রতি তলায় চারটি করে মোট আটটি ইউনিট। এর মধ্যে নিচতলার সিঁড়ি লাগোয়া একটি ফ্ল্যাট জঙ্গিরা ভাড়া নেয় মাসখানেক আগে। 

ভবন মালিক রেহানা বেগম ছোট ছেলে নাছিরকে নিয়ে থাকেন দোতলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটে। আর বড় ছেলে মো. মহিউদ্দিন তার পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের আকবর শাহ এলাকায় থাকেন।

ওই জঙ্গিদের বিষয়ে জানতে রেহানা বেগম ও নাছিরকে সীতাকুণ্ড থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

মহিউদ্দিন বলেন, মাঝে মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে তিনি মায়ের কাছে আসেন। তবে বুধবার অভিযানের সময় তিনি ওই বাড়িতে ছিলেন না।

তিনি বলেন, দুই ব্যক্তি গত মাসে এসে ছয় হাজার টাকায় ওই ফ্ল্যাট ভাড়া করেন। বলেছিলেন, সম্পর্কে তারা শ্যালক-দুলাভাই, কক্সবাজারের রামুতে তাদের রবারের ব্যবসা রয়েছে।

“একজনের বয়স হবে ৪০, অন্যজনের ৩০ এর মত। সীতাকুণ্ডেও রবারের ব্যবসা করবেন- এই কথা বলে বাসা ভাড়া নিয়েছিল।”

তবে ওই দুই ব্যক্তির কারও নাম বলতে পারেননি মহিউদ্দিন। তার ভাষ্য, বাসা ভাড়ার বিষয়টি তার মা দেখেন, তিনিই নাম জানেন।

বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র রাখা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, “দু’জনের স্ত্রীসহ চারজন থাকবে বলে জানিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে দুটি ভোটার আইডির কপি নিয়েছিল মা। তবে একটি ঝাপসা থাকায় পরে তাদের দুই জনকে পাসপোর্ট সাইজের ছবিও দিতে বলা হয়েছিল। আর বলা হয়েছিল, ব্যবসার মালামাল যেন বাসায় না আনে।”

ওই ফ্ল্যাটে বাইরের লোকজন যাওয়া-আসা করত কি না, ভাড়াটেদের আচার আচরণ কেমন ছিল- সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি মহিউদ্দিন।

পাশের নামার বাজার ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকায় এক বাড়িওয়ালার কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার বিকাল ৩টার পর পুলিশের এই অভিযানের সূচনা হয়। ‘সাধন কুটির’ নামের দোতলা ওই বাড়ির নিচ তলা থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ জসিম ও আর্জিনা নামের এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই কয়েকশ মিটার দূরে প্রেমতলার ‘ছায়ানীড়ে’ এই জঙ্গি আস্তানার কথা জানতে পারেন পুলিশ কর্মকর্তারা।  

দোতলা ‘সাধন কুটিরের’ নিচতলার ওই ফ্ল্যাট জসিম ভাড়া নিয়েছিলেন ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে। বলেছিলেন, তিনি কাপড়ের ব্যবসা করেন, বাড়ি রামুতে।

ওই বাসায় প্রচুর সার্কিট দেখার পর এনআইডি পরীক্ষা করে সেটি ‘ভুয়া’ নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশে খবর দিয়েছিলেন সাধন কুটিরের মালিক সুভাষ চন্দ্র দাশ।