‘মিতু ও আকরাম হত্যা একই উদ্দেশ্যে’

স্ত্রীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের ‘পরকীয়ার’ কারণে এসআই আকরাম হোসেন খুন হয়েছিলেন দাবি করে তার বোন জান্নাত আরা পারভীন বলছেন, সেই একই কারণে গেল বছর বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2017, 03:07 PM
Updated : 15 March 2017, 07:09 PM

বুধবার মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) কামরুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দুই বছর আগে ঝিনাইদহে ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ নিহত আকরামের বোন পারভীন।

চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন পারভীন ও তার ভাগ্নি মোর্শেদা জাহান ডলি।

সেখান থেকে বেরিয়ে পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ভাই এসআই আকরাম হোসেন ও মিতু হত্যা একই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে এবং তার কিছু তথ্য দিয়ে গেলাম। আকরামের স্ত্রী বর্ণির সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকীয়ার কারণে প্রথমে আকরাম ও পরে মিতুকে হত্যা করা হয়।”

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আকরামের পাঁচ বোন অভিযোগ করেন, তাদের ভাইয়ের স্ত্রী ঝিনাইদহের মেয়ে বনানী বিনতে বসির বর্ণির সঙ্গে বাবুলের ‘সম্পর্ক’ ছিল।

“২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আকরামকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাবুল আক্তার ও বর্ণি। এ কারণে আকরামকে যমুনা সেতু হয়ে ঝিনাইদহ আসার পরামর্শ দেয় বর্ণি। পথে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। পরে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার বড়দাহ থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

“আকরামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর ও পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে আকরামের অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল, কিন্তু বর্ণি স্যুপে বিষ মিশিয়ে খাওয়ালে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি আকরাম মারা যান।”

ঘটনার এতদিন পর কেন বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন জানতে চাইলে পারভীন বলেন, “আমার ভাইকে ‘পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে’ হত্যা করা হয়েছিল। এটাকে ওরা ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ বলে চালানোর চেষ্টায় ছিল।”

বাবুল আক্তার ঝিনাইদহের এসপি’র মাধ্যমে তাদের ‘চাপে’ রেখেছিলেন দাবি করে পারভীন বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল, পুলিশ প্রশাসনে বোনদের কোনো অধিকার নেই, বৌদের অধিকার আছে।”

আকরামের মৃত্যুর সময় বাবুল আক্তার বিদেশে মিশনে থাকলেও ওই সময় তিনবার দেশে আসেন দাবি করে পারভীন বলেন, “ওই সময় বাবুল আক্তার মাগুরার বাড়ি ও ঢাকায় থেকে বর্ণিকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যেন মামলা করতে না পারি তার জন্য ছুটাছুটি করেন। এছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাল্টে ফেলার জন্যও কাজ করেছিলেন।”

মিতু হত্যার নয় মাস পর কেন দুই হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র খোঁজা হচ্ছে-এ প্রশ্নের জবাবে আকরামের বোন বলেন, “মিতুকে হত্যার পর আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মিতুর বাবা-মা ‘ভুল বুঝে’ বাবুল আক্তারের পক্ষে কথা বলেছিলেন, এজন্য যেতে পারিনি।”

কিছুদিন আগে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন মেয়ে খুনের জন্য বাবুল আক্তারকে সন্দেহের তালিকায় রাখার কথা জানানোর পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে জানান পারভীন।   

বাবুল আক্তারের সঙ্গে বর্ণির সম্পর্কের কী প্রমাণ আছে জানতে চাইলে পারভীনের সঙ্গে থাকা তার ভাগ্নি মোর্শেদা জাহান ডলি বলেন, “২০০৭ সালে মামার (আকরাম) মেয়ে হওয়ার পর আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। অস্ত্রোপচার হওয়ার কারণে বর্ণি পাঁচদিন হাসপাতালে থাকার পর বাবুল আক্তারের বোন লাবনীর বাসায় ছিলেন। সেখানে বাবুল আক্তার তার সেবা করেন।

“আমার মামা অনেকবার জানিয়েছিলেন বাবুল আক্তারের জন্য তিনি সংসারে অশান্তিতে আছেন। আকরামের মৃত্যুর এক মাস আগে বর্ণি বাবুল আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ‘গেঞ্জাম’ করে ঝিনাইদহের ভাড়া বাসায় উঠেন।”

ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার কথা বলে ডেকে নিয়ে বাবুল আক্তারের বাড়ি শৈলকুপা এলাকায় ‘আকরামের উপর হামলা করা হয়’ বলে দাবি করেন পারভীন ও তার ভাগ্নি।

এছাড়া আকরামের স্ত্রী বর্ণি দুই বছর ধরে বাবুল আক্তারের বাড়িতে থাকছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

সব বিষয় তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানোর কথা বলেছেন পরভীন।

তবে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, “আমাকে লিখিতভাবে কিছু দেওয়া হয়নি। মিডিয়াকে যা দিয়েছে সে ধরনের একটি কপি আমাকে দিয়েছে।

“আমি কাউকে ডাকিনি। তারা নিজ থেকে কথা বলতে এসেছেন। তারা অনেক কিছু বলেছে, আমি তাদের বক্তব্য শুনেছি।”

যাদের নাম এসেছে তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান কামরুজ্জামান।