পৃথিবীতে এসেই স্বজনহারা, সহায় এখন সবাই

জন্মের পরই ‘অনাহুতের’ ঠাঁই হয়েছিল ময়লার স্তূপে, সেখান থেকে ভাগ্য তাকে নিয়ে এসেছে হাসপাতালের শয্যায়; এখন অনেকের প্রিয়মুখ হয়ে উঠেছে সে।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 02:12 PM
Updated : 23 Feb 2017, 02:45 PM

নবজাতকের চিকিৎসায় হাসপাতালে ভর্তি নারীদের কেউ কেউ মমতা নিয়ে শিশুটিকে ‍দিচ্ছেন বুকের দুধ। তার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এরইমধ্যে নামও পেয়েছে দুদিনের শিশুটি, বাঙালির শোক-অর্জনে স্মরণীয় ‘একুশ’ হয়েছে তার নাম।  

এই নামের কারণ ব্যাখ্যায় আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একুশের প্রথম প্রহরের আগে শিশুটি ছিল জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে বাঁচাতে অনেকটা লড়াই করতে হয়েছে। তাই তার নাম ‘একুশ’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে চিকিৎসাধীন এই শিশুকে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য নবজাতকের মায়েরা নিয়মিত পরিচর্যা করছেন। পুলিশের পাশাপাশি ও উদ্ধারকারী যুবকরাও তার খোঁজ-খবর রাখছেন।

গত সোমবার রাতে নগরীর আকবর শাহ থানার কর্নেল হাট প্রশান্তি আবাসিক এলাকার একটি ভবনের পেছনে আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে।

হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জগদীশ চন্দ্র দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ও উদ্ধারকারী কয়েকজন যুবক নবজাতকটিকে নিয়ে আসেন।

সে সময় শরীর ঠাণ্ডা ও ময়লা লাগানো থাকায় শিশুটি শ্বাসকষ্টে ভুগছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “ধারণা করছি ওইদিনই শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।”

ডা. জগদীশ বলেন, শিশুটি দ্রুত সেরে উঠছে। হাসপাতালের সবাই মিলে তার সেবা শুশ্রূষা করছেন। পাশের বেডের শিশুদের মায়েরা তাকে বুকের দুধ দিচ্ছেন।

উদ্ধারকারী যুবকদের মধ্যে দুইজন ইফতেখায়রুল রানা ও সাব্বিরুল আলভী জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে একটি দোকানে বসে গল্প করার সময় পার্শ্ববর্তী দেয়ালের পাশ থেকে একটি ছোট্ট শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। দেয়ালের উপর উঠে মোবাইলের আলো ফেলতে ময়লার স্তূপে শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখেন। তখনও শিশুটির গায়ে রক্ত লাগানো ছিল।

এরপর থানায় খবর দিলে পুলিশ আসে এবং সবাই মিলে নবজাতকটিকে হাসপাতালে নেয়।

ওই সময় ঘটনাস্থলে যাওয়া আকবর শাহ থানার এসআই নুরুল আলম জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় আল আমীন হাসপাতালে নিয়ে যান। শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে মা ও শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

“শিশু হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে আমরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি।”

শিশুটিকে বুকের দুধ দেওয়া সুচিতা বড়ুয়া ও শিউলি দত্ত নামে দুই নারী জানান, তাদের সন্তানরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই শিশুটিকে নিজেদের শিশুর মতো করে দুধ পান করাতে পেরে তারা আনন্দিত।

প্রথমবার মা হওয়া শিউলির আনন্দ একটু বেশি: “এখনও নিজের সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে পারিনি। তবে এ শিশুটিকে দুধ পান করাতে পেরে সে কষ্টটা ভুলে, অনেক আনন্দিত।”

ওসি আলমগীর জানান, শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য অনেকেই আগ্রহ দেখিয়ে যোগাযোগ করেছে।

“তবে যেহেতু শিশুটির মা-বাবার সন্ধান পাওয়া যায়নি তাই আমরা আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে হস্তান্তর করব। আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত শিশুটি পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকবে।”

ওসি বলেন, যে ভবনের পেছন থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে তার দ্বিতীয় তলায় ‘লাইফ কেয়ার সেন্টার’ নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। ওই ভবনের দেয়ালেও রক্তের দাগ পাওয়া গেছে।

“বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি,” বলেন ওসি।