শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘সন্দ্বীপের সীমানা রক্ষা আন্দোলন কমিটি’ আয়োজিত মত বিনিময় সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়।
‘অখণ্ড সন্দ্বীপের সীমানা রক্ষার দাবিতে ও সন্দ্বীপের পশ্চিমাংশে জেগে ওঠা চর সমূহের মালিকানা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে’ এই মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন বলেন, ১৯১৩ সালে করা জরিপ অনুসারে সন্দ্বীপের আয়তন ছিল এক হাজার আট বর্গ মাইল বা এক হাজার ৬২৮ বর্গ কিলোমিটার। অব্যাহত ভাঙনের কারণে এখন সন্দ্বীপের আয়তন শুধু ২২৫ বর্গ কিলোমিটার।
“পূর্ব পুরুষের ভিটে-মাটি ভেঙে দীর্ঘদিন ধরে আস্তে আস্তে যে চর জেগে উঠেছে, তার মালিকানা সন্দ্বীপের। সে হিসেবে উড়িরচর, জাহাইজ্জার চর (স্বর্ণদ্বীপ), ঠেঙ্গার চরসহ নতুন চরগুলো সন্দ্বীপের। কিন্তু ২০১৩ সালে জরিপে এগুলো নোয়াখালীর অংশ দেখিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।”
সুমন বলেন, স্বর্ণদ্বীপে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানকার সাইনবোর্ডে লেখা- নোয়াখালী। ঠেঙ্গার চর সন্দ্বীপের সাবেক নয়ামস্তি ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্ত। অথচ এখন নোয়াখীলীর হাতিয়া উপজেলার অর্ন্তভুক্ত করতে চাইছে।
“সেখানে সরকার রোহিঙ্গা পুনর্বাসন করতে চায়, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত; কিন্তু আগে এসব চর যে সন্দ্বীপের তার স্বীকৃতি দিতে হবে।”
সভায় সন্দ্বীপের কালাপানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল হক চৌধুরী বায়রন বলেন, ১৯১৩-১৯১৬ সালে করা সিএস জরিপ অনুসারে স্বর্ণদ্বীপ (জাহাইজ্জ্যার চর) হাতিয়া থেকে ৩০ মাইল দূরে।
“ঠেঙ্গার চরের দূরত্ব সন্দ্বীপ থেকে নদী পথে মাত্র ১৫ মিনিট। স্বর্ণদ্বীপ ও ঠেঙ্গার চর কোন উপজেলায়, সেটা আগে নির্ধারণ করতে হবে।”
মেঘনা অববাহিকায় সাগরের বুকে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম উপকূলের সীতাকুণ্ড উপজেলার দূরত্ব প্রায় ১০ মাইল।
২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ও ১২ কিলোমিটার প্রস্থের ঠেঙ্গার চর জেগে ওঠে ২৫ বছর আগে। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের এ চরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
নোয়াখালীর দক্ষিণে ১৯৭৮ সালে মেঘনা নদীতে জেগে ওঠে জাহাইজ্জার চর। ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চরটি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং বসতি স্থাপনের উপযোগী করে তুলতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে তিন মিটার উচ্চতার এই চরটি এর আগে ডাকাতের চর নামে পরিচিত ছিল। সম্প্রতি এর নাম দেওয়া হয় স্বর্ণদ্বীপ।
সন্দ্বীপ উপজেলার সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি চেয়ে ২০১৩ সালে হাই কোর্টে রিট মামলা করেন সন্দ্বীপের কালাপানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল হক।
তিনি বলেন, গত বছরের ২ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে তিন মাসের মধ্যে ১৯১৩ সালের সিএস অনুসারে সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সভায় সন্দ্বীপের বাসিন্দা কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বীর বিক্রম বলেন, “সন্দ্বীপের বিরাট অংশ ভাঙনে হারিয়ে গেছে। জেগে ওঠা চরগুলোও সন্দ্বীপের সীমানায়। তাই উপজেলার সীমানা নির্ধারণ করা উচিত।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন, “সন্দ্বীপের নদী ভাঙা মানুষ বাঁধে-সড়কে মানবেতর জীবন যাপন করছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এখনও উদ্বাস্তু।
“অথচ সন্দ্বীপের সীমানায় জেগে ওঠা চর অন্য জেলাকে দেওয়া হচ্ছে। নিজেদের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। প্রয়োজনে ঠেঙ্গার চর ও জাহাজের চর অভিমুখে লংমার্চ করব।”
সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারণ ও নতুন চরগুলোর মালিকানার দাবিতে শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
মত বিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউল হাসান শিবলু, অর্থ সম্পাদক মজিবুল মাওলা, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন মামুন ও মোকতাদের আজাদ খান উপস্থিত ছিলেন।