এ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উন্নয়নের দৌড়ে জয়ী হওয়া সম্ভব নয় মত প্রকাশ করে ১৬ কোটি মানুষের জন্য ‘একক মানসম্পন্ন’ এবং ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ’ শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।
বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ‘শিক্ষাবর্ষ সমারম্ভ অনুষ্ঠান ২০১৬-২০১৭’ এ সমারম্ভ বক্তা হিসেবে বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি মইনুল বলেন, “আমাদের প্রাইমারি লেভেলে আমরা ১১ ধরনের বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছি। রাষ্ট্রের পয়সায় ক্যাডেট কলেজ, ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল চলে; আবার গরিব কৃষক-শ্রমিকের ছেলেমেয়ের জন্য মাদ্রাসাও চালাই আমরা।
কুদরত এ খুদা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুসারে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘একক শিক্ষা’ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে মইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের যে সাংবিধানিক অঙ্গীকার- একক মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত- যেটা বঙ্গবন্ধুর আমলের কুদরত এ খুদা শিক্ষা কমিশন সুপারিশ করেছিল।
“এতদিন পরে ২০১১ সাল থেকে আমরা সেটা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। এটাকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
মেধাবীদের বিদেশে চলে যাওয়ার প্রবণতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে মইনুল ইসলাম বলেন, “একটা দুঃখের বিষয়- আমরা আমাদের সেরা ছাত্রছাত্রীগুলোকে বুয়েটে ভর্তি করাই। কিন্তু বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরে শতকরা ৮২ জন বিদেশে চলে যায়।
বাজেটে কম বরাদ্দের পরও শিক্ষামন্ত্রী ‘শিক্ষা বিপ্লবের’ নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন বলে মন্তব্য করে এজন্য মন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান মইনুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘ভুল, ত্রুটি, ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতার’ মধ্যেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বক্তব্যে মইনুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “তার (মইনুল ইসলাম) মুখ থেকে একটা স্বীকৃতি পাওয়া বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এটা আমার একক কোনো অবদান নয়।
“সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সম্মিলিত চেষ্টার মধ্য দিয়েই আজকে শিক্ষার অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। যদিও আমাদের অনেক ভুল আছে, ত্রুটি আছে, ব্যর্থতা আছে, সীমাবদ্ধতা তো আছেই। এরমধ্যেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।”
“২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে অগ্রবাহিনী হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তাদের গড়ে তুলতেই ২০১০ সালে নতুন শিক্ষানীতি করেছি। গতানুগতিক-প্রচলিত শিক্ষায় নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসে গড়ে তুলতে পারব না।”
তিনি বলেন, “তার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন চাই। সেটা হলো আজকের যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিশ্বমানের শিক্ষা, জ্ঞান-প্রযুক্তি ও দক্ষতা।
“শুধু জ্ঞান দিয়ে মাথা ভর্তি করলে চলবে না। আমাদেরকে ভালো মানুষ হতে হবে। সততা নিষ্ঠা নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত এক পরিপূর্ণ মানুষ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।”
এরপর অতিথিরা বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে নতুন চালু হওয়া এনাটমি মিউজিয়াম ও ফিশারিজ মিউজিয়াম ঘুরে দেখেন।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।
অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারির প্রক্টর অধ্যাপক গৌতম কুমার দেবনাথ, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো. রায়হান ফারুক এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক নুরুল আবছার খান বক্তব্য রাখেন।