গত ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এই সহ-সম্পাদকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর তার মা হত্যার অভিযোগ তুলে মামলা করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা আত্মহত্যার কথা বললেও তাতে আপত্তি জানান দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।
এরপর তার আপত্তিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা দিয়াজের দেহে জখম পাওয়ার কথা জানান। তবে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেবেন বলে জানান।
ওই প্রতিবেদন আসার আগেই তদন্ত কর্মকর্তা বদলানোর উদ্যোগের খবর পাওয়া গেল, যাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে দিয়াজের পরিবার।
দিয়াজের বোন জুবাইদা সরওয়ার চৌধুরী বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরশুদিন আমরা শুনেছিলাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বদল করা হতে পারে। আজ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে শুনলাম সেরকমই হচ্ছে।
“সব মিলিয়ে আপনারাও বুঝতে পারছেন, কী হচ্ছে। তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং আমাদেরকে পিছিয়ে দিতেই আইও বদল করা হচ্ছে।”
দিয়াজ হত্যা মামলার আইও বদলের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের এসপি আবদুর রহমান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অফিসিয়াল কারণেই আইও বদল হচ্ছে।
“আইও হিসেবে দায়িত্বপালনকারী এএসপি অহিদুর রহমান প্রায় আড়াই মাস আগে গাইবান্ধায় বদলি হন। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার চট্টগ্রামে থাকার কথা ছিল। এটা দাপ্তরিক বিষয়, আর কিছু নয়।”
জ্যেষ্ঠ এএসপি হুমায়ন কবিরকে তদন্তভার দিতে অনুমোদন চেয়ে মঙ্গলবার সিআইডি সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান এসপি রহমান।
“এ সংক্রান্ত অনুমতি হয়ত আগামীকাল চলে আসবে। নতুন যাকে আইও করা হচ্ছে তিনি জ্যেষ্ঠ, অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও ভালো কর্মকর্তা। তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না।”
দিয়াজের বোন জুবাইদা বলেন, “উনি বদলি হবেন সেটা যদি আগে থেকেই জানা থাকে, তাহলে উনাকে কেন আইও করা হয়েছিল?
“উনি সব দেখেছেন-বুঝেছেন, ঘটনাস্থলে গিয়েছেন এবং ময়নাতদন্তকারীদের সাথে কথাও বলেছেন। এখন আবার অন্য একজনকে সব নতুন করে জানাতে-বোঝাতে হবে। এতে করে তদন্ত পিছিয়ে পড়তে পারে।”
দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় ২৪ নভেম্বর আদালতে হত্যা মামলা করেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। সেসময় আদালত মামলাটি তদন্তে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়ে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছিল।
এ মামলায় ৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য আছে বলে জানান দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবাইদা।
তিনি বলেন, “সাধারণত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেতে দীর্ঘ সময় লাগলেও প্রথম ময়নাতদন্ত এল দুই দিনের মধ্যে। উনি যদি জানেনই বদলি হবেন তাহলে আদালত নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে উদ্যোগী হলেন না কেন?
“চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দিয়াজ অনুসারীদের উপর হামলা, মামুনের গ্রেপ্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর সংবাদ সম্মেলন এবং আইও বদলসহ কয়েকটি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা হতে পারে।”
“দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আমাদের পক্ষে আসতে পারে এমনটা বুঝতে পেরেই হয়তো এসব ঘটানো হচ্ছে,” বলেন জুবাইদা।
এ বিষয়ে সিআইডির এএসপি অহিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আগেই বদলি হয়েছি। আগামী সোমবার চলে যাব। রোববার মামলার কাগজপত্র নতুন আইওকে বুঝিয়ে দেব।
“গাইবান্ধায় এমপি মারা গেছেন। তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে। যাওয়ার আগে মামলার বিষয়ে আমি নতুন আইওকে সব বলে যাব।”