দিয়াজের মৃত্যু: আসামি টিপু দুষছেন অন‌্য ৪ ছাত্রলীগ নেতাকে

দিয়াজ ইফরান চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় তার মায়ের করা হত‌্যামামলার আসামি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু নিজের দায় অস্বীকার করে সংগঠনের অন‌্য চার নেতাকে দায়ী করেছেন।

চট্টগ্রাম ব‌্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2016, 01:31 PM
Updated : 27 Dec 2016, 01:31 PM

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সফরের সময় বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে আলোচনায় থাকা টিপু মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দিয়াজকে ‘আত্মহত‌্যায় প্ররোচিত’ করার জন‌্য বিশ্ববিদ‌্যালয় কমিটির চার নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

তারা হলেন- বিশ্ববিদ‌্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মামুন, নাজিম, সৌমেন পালিত, পাঠাগার সম্পাদক আবু বকর তোহা।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত টিপু চট্টগ্রাম পূর্ব রেলের দরপত্র নিয়ে সংঘাতে জোড়া খুনের মামলায়ও আসামি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ‌্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক দিয়াজও সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

ক‌্যাম্পাসের বাসা থেকে গত ২০ নভেম্বর রাতে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। শুরুতেই এটাকে হত‌্যা বলে দাবি করে তার পরিবার।

চট্টগ্রাম মেডিকেলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা ‘আত্মহত‌্যা’ বলার পর তা মেনে না নিয়ে হত‌্যা মামলা করেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় ময়নাতদন্ত হয় ১১ ডিসেম্বর।

দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারীরা দেহে জখমের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানালেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।

বুধবার ঢাকা মেডিকেলের ময়নাতদন্তকারীরা চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা সফরের দিন বদলে ১ জানুয়ারি করেছেন।

তার মধ‌্যেই সংবাদ সম্মেলনে এসে টিপু বলেন, “দিয়াজের মৃত্যুর পর তার বোনের স্বামী ছরওয়ার চৌধুরী ও মামা রাশেদ বিন আমিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ২৫ লাখ টাকার চেকের ভাগ দিতে দেরি হওয়ায় চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মামুন, নাজিম দিয়াজকে মারধর করে বলে জানিয়েছে ।

“গ্রুপের নেতা হয়েও মামুন, নাজিমের হাতে মার খাওয়ায় অপমান সইতে না পেরে দিয়াজ আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

আলমগীর টিপু

অতীতে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রলীগ নেতার উপর হামলার ঘটনায় দিয়াজের অনুসারীদের দায়ী করে টিপু বলেন, “গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদে আমরা জানতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের দিয়াজ ইফরান বলেছিল, জুনিয়রদের উপর থেকে আমার নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে।”

গত ৪ ও ১১ নভেম্বর দিয়াজের দুটি ফেইসবুক স্ট্যাটাস উদ্ধৃত করে দিয়াজের সঙ্গে মামুনের সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় এ মৃত্যু হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানান টিপু।

বিশ্ববিদ‌্যালয়ের নতুন কলা ভবন ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজের প্রায় ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রকে কেন্দ্র করে কয়েক মাস ধরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে।

তার মধ‌্যে গত ২৯ অক্টোবর ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকায় দিয়াজের বাসাসহ ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মীর বাসায় হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।

অভিযোগ আছে, ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা ওই হামলা চালিয়েছিল।

দিয়াজ ইরফান চৌধুরী

টিপু দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় তার ‘কথিত প্রেমিকা’কে জিজ্ঞাসাবাদের দাবিও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দিয়াজের সাথে সম্পর্কের কারণে …. চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ লাভ করে। পদ পাওয়ার পর সে দিয়াজকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।”

দিয়াজের মৃত্যুর পর থেকে ওই ছাত্রী আত্মগোপন করে আছেন এবং তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখেছেন বলে জানান টিপু।

চট্টগ্রাম বিএমএ নির্বাচনে জয়ী সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থিত ডা. মুজিব-ডা. ফয়সল ইকবাল পরিষদকে বিতর্কিত করতে কিছু ছাত্রনেতার প্ররোচনায় দিয়াজের পরিবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন টিপু।

দিয়াজের মৃত্যুর তদন্তে তিনিসহ অন্যরা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া না গেলে মামলার বাদীর (দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী) বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করারও হুমকি দেয় তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে দিয়াজের ‘বিয়ে, তালাকনামা’সহ বেশকিছু কাগজ সরবরাহ করা হয় সাংবাদিকদের।

বিশ্ববিদ‌্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজনের থাকার ঘোষণা দেওয়া হলেও তিনি ও তার অনুসারী কোনো নেতা-কর্মীকে সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়নি।

টিপু বলেন, চোখের অসুস্থতাজনিত কারণে সুজন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারেননি।