বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বন্দর নগরীর লালদীঘিতে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যান মোশাররফ, যিনি নিজেও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা।
মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের কক্ষে প্রায় চার ঘণ্টা ছিলেন তিনি।
বেলা ২টার দিকে তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে মিতুর বাবা মোশাররফ সাংবাদিকদের বলেন, “মামলা সংক্রান্তে ও অগ্রগতি সম্পর্কে কথা বলতে এসেছি।”
মামলার বাদী বাবুলের চট্টগ্রামে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে সেখানে গেলেন তার শ্বশুর।
কাউকে সন্দেহ করছেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মোশারফ বলেন, “বাই নেইমে কারও কথা বলিও নাই এবং সন্দেহও করি না।
“খুনের মোটিভটা কী এবং কেন খুন করল একটা মেয়ে মানুষকে; সে তো কোনো চাকরি করে না... কে এ খুনের ব্যাপারে সহায়তা করছে? সে যেই হোক উদঘাটন করার জন্য রিকোয়েস্ট করেছি।”
সন্ত্রাসীরা মিতুকে হত্যা করেছে জানালেও কী কারণে কিংবা কার প্ররোচনায় মিতুকে লক্ষ্যবস্ত করে হামলা হয়েছিল, সে বিষয়ে পুলিশ এখনও কিছু জানাতে পারেনি।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল ঢাকায় বদলি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে গত ৫ জুন ভোরে বন্দর নগরীর ও আর নিজাম রোডে সন্তানের সামনে মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে যায় দুর্বৃত্তরা।
ঘটনার পর বাবুল ঢাকা থেকে গিয়ে মামলা করেন এবং দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় এসে শ্বশুর বাড়িতে ওঠেন।
শুরুতে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও পরে পুলিশের তদন্তের গতিপথ পাল্টায়। এর মধ্যে ২৪ জুন রাতে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে নিয়েও সন্দেহের গুঞ্জন সৃষ্টি হয়।
তবে এই বিষয়ে বাবুল কিংবা পুলিশ বিভাগ নীরব থাকে। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাবুলের ইচ্ছায় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নতুন একটি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর গত ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে গিয়ে হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন বাবুল।
মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে। দুজন পুলিশের সঙ্গে ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতও হয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেন নামে দুজন নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত ২৬ জুন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার নাম বলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ হত্যাসহ প্রায় ছয় মামলার আসামি মুছা ছিলেন চট্টগ্রামে বাবুল আক্তারের সোর্স। পাশাপাশি অস্ত্রের জোগানদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার এহতাশেমুল হক ভোলাও বাবুলের সোর্স বলে পরিচিত।
মিতুর বাবা মোশাররফ বলেন, “রিকোয়েস্ট করেছি তদন্তকারী অফিসারকে মুছা এবং কালু, যেটা পত্র-পত্রিকায় এসেছে, এদের অ্যারেস্ট করার জন্য; যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায়।”
বাবুলকে নিয়ে গুঞ্জনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার শ্বশুর বলেন, “বাবুল সাহেব কেন, যেই জড়িত তাদের তথ্য উদঘাটন করতে বলেছি।”
জামাতা বাবুলকে এখনও সন্দেহ করছেন না বলে তার কথায় স্পষ্ট। তদন্ত নিয়ে এখনও কোনো অসন্তোষ নেই অবসরপ্রাপ্ত এই পুলিশ কর্মকর্তার।
তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসা ছিল, সে বিষয়ে কথা হয়েছে।”
কী বিষয় জিজ্ঞাসা করা হয়েছে- এ প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “মিতুর বাবা হিসেবে যা যা দরকার জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। সেগুলো ভেরিফাই দরকার।”