গোলাম রব্বানী হত্যা: আত্মসমর্পণের পর দুই আসামি কারাগারে

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী কমডোর গোলাম রব্বানী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি হাই কোর্টের আদেশ অনুসারে চট্টগ্রামের আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

চট্টগ্রাম ব‌্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2016, 12:12 PM
Updated : 15 Dec 2016, 12:12 PM

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে আত্মসমর্পণের পর চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুহিতুল হক এনাম চৌধুরী তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এই দুই আসামি হলেন- চট্টগ্রামের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও মো. সেলিম।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আইয়ুব খান সাংবাদিকদের বলেন, মামলার আরেক

আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুলের পক্ষে তার আইনজীবী জামিন আবেদন করেছেন।

এর আগে গত সোমবার চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেন সাইফুল। এ মামলায় সাইফুলের বিষয়ে নতুন রায় দিতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

হাই কোর্টের নির্দেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন আসামি আত্মসমর্পণ করেছেন। দণ্ডিত আরেক আসামি কেইপিজেডের সাবেক প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ‍হুমায়ুন কবির চৌধুরী মারা গেছেন বলে তার আইনজীবীরা জানান।

কমোডর গোলাম রব্বানী হত্যা মামলার নথি ও হাই কোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি গত অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে চট্টগ্রামের আদালতে পৌঁছায়।

৫ অক্টোবর প্রকাশিত হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ডিত তিন আসামি আবু নাসের, হুমায়ুন কবির ও সেলিমকে আট সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করে দণ্ড ভোগ করতে হবে।

পাশাপাশি আরেক আসামি সাইফুল ইসলামকেও আট সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশনা দিয়ে হাই কোর্ট বলেছিল, তার জামিন বিবেচনার পূর্ণ স্বাধীনতা বিচারিক আদালতের আছে।

২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল মাইক্রোবাসে করে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন চট্টগ্রামের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোনের (কেইপিজেড) তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রব্বানী। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ দিন পর তার মৃত্যু হয়।

জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের এডিসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করা নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রব্বানী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও নৌ-পরিবহন বিভাগের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেল হত্যা মামলায় তিনি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ‌্য দেন।

ওই হত‌্যা মামলার রায়ে ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ হাশেম ও আব্দুল মালেক সোহেল নামের তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

কিন্তু বাকি দুই আসামি কেইপিজেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও সাবেক প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে দেওয়া হয় পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জারিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড।

আপিল শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ মামলার রায় ঘোষণার পর গত ৫ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।

এ হত্যা মামলায় দুই আসামিকে ‘কম সাজা’ দেওয়া হলেও বিচারিক আদালত এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেনি বলে হাই কোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়।

হাই কোর্ট আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবিরের সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

এছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া তিন আসামির মধ্যে মো. হাশেম ও সোহেল হাই কোর্টে খালাস পান; মো. সেলিমের যাবজ্জীবন বহাল থাকে।

এ মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি মানসুর আলম ও সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুলকে নিম্ন আদালতের রায়ে খালাস দেওয়া হয়। এদের মধ‌্যে সাইফুল বিচার চলাকালে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়েছিলেন।

বাদীপক্ষ সাইফুলের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করলেও মানসুর আলমের বিরুদ্ধে করেনি। সাইফুলের বিষয়ে বিচারিক আদালতকে নতুন করে রায় দিতে বলেছে হাই কোর্ট।