জানুয়ারিতেই চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবি

প্রধান বিচারপতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আগামী জানুয়ারিতেই চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2016, 12:52 PM
Updated : 3 Dec 2016, 12:52 PM

শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম’ এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানায়।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে এবং প্রধান বিচারপতি কর্তৃক চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের ঘোষণায় অভিনন্দন এবং দ্রুত চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়নে’র দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট আইনজীবী সমিতির নৈশভোজে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা চট্টগ্রাম ও সিলেটে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন হবে বলে জানান।

ওই অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমারও আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু কিছু বিচারপতির পদ শূন‌্য আছে। বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এটা শেষ হলেই সিলেট ও চট্টগ্রামে হাই কোর্ট বেঞ্চ স্থাপনে প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ও সাবেক জেলা পিপি আবুল হাশেম বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতিকে অশেষ ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। উনাদের দুজনেরই তীব্র সদিচ্ছা আছে।

“২৭ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে চলেছি। প্রধান বিচারপতি গত বছরও চট্টগ্রাম সফরে তার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। সাংবিধানিক বা অন্য কোনো বাধা নেই, বাধা শুধু ঢাকার স্বার্থান্বেষী আইনজীবীরা।”

আবুল হাশেম বলেন, হাইকোর্টের প্রতিটি বেঞ্চ চট্টগ্রামবাসীর মামলা। শুধু অ্যাডমিরালটি কোর্টে ১৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। নিজের স্বার্থেই তারা (স্বার্থান্বেষী আইনজীবীরা এতে বাধা দিচ্ছে, জনস্বার্থে নয়। তারা আইনের শাসন চায় না।

“স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়েও যদি আমরা জাতির জনকের দেওয়া বাহাত্তরের সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন করতে না পারি, তাহলে আর কি পেলাম? জানুয়ারিতেই আমরা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়ন চাই।”

আবুল হাশেম বলেন, সুপ্রিম কোর্টে মামলা জটের কারণে দীর্ঘসূত্রিতা ও বিলম্বিত বিচার নিয়ে প্রধান বিচারপতি নিজে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আইনজীবী বন্ধুদের প্রতি করজোড় মিনতি- আইনের শাসন ও দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি প্রত্যাশায় সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়নে তারা যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সংবিধান অনুসারে সার্কিট বেঞ্চের বিষয়ে ‘না’ বলার কোনো সুযোগ নেই। সংকট একটাই- আজও বাস্তবায়ন হলো না।

“একটি স্বার্থান্বেষী মহল চায় না, মানুষ সর্বোচ্চ আদালতে বিচার প্রার্থনার সুযোগ পাক। তারাই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন, এবার যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়।”

বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব শঙ্কর প্রসাদ দে বলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই সার্কিট বেঞ্চ চট্টগ্রামে ফিরবে এমন আশ্বাস দিয়ে ১৯৮৯ সালে তা নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পিছনে রশির টান এত বেশি যে তা আর ফেরেনি।

“স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্ত উপেক্ষার একটাই উপায়- প্রধান বিচারপতির ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন। অবকাঠামো এবং বিচারকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা চট্টগ্রামে নেই।”  

১৯৮২ সালের ১১ মে চট্টগ্রামে হাই কোর্টের একটি স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালের ১৭ জুন সামরিক ফরমানের ৪ (এ) ধারা সংশোধন করে স্থায়ী বেঞ্চকে সার্কিট বেঞ্চ (অস্থায়ী) করা হয়।

১৯৮৬ সালে সংবিধান পুনরুজ্জীবনের পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১০০ অনুসারে সার্কিট বেঞ্চের বিধান থাকায় চট্টগ্রামসহ দেশের ছয়টি সার্কিট বেঞ্চ বহাল থেকে যায়। এরপর ঢাকার আইনজীবীদের একাংশ সার্কিট বেঞ্চ ফিরিয়ে নেয়ার আন্দোলন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ২(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে, ছয়টি সার্কিট বেঞ্চই আবার স্থায়ী বেঞ্চের মর্যাদা দেয়া হয়।

১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাই কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ সংক্রান্ত অষ্টম সংশোধনীর ২(ক) অনুচ্ছেদটি বাতিলের আদেশ দিলে চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও সিলেটের হাই কোর্ট বেঞ্চগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

এরপর ১৯৮৯ সালেই চট্টগ্রামের সন্তান আইনজীবী মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। 

শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সমন্বয়ক এ এস এম বজলুর রশিদ, আইনজীবী সৈয়দ মো. কামাল উদ্দিন, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, চৌধুরী আনোয়ার উল্লাহ ও মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন।