এক মঞ্চে মহিউদ্দিন-মনজুর, ফেরার আভাস

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে পাশাপাশি বসেছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক মেয়র মনজুর আলম; মিলেছে মনজুরের আওয়ামী লীগে ফেরার আভাসও।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2016, 01:55 PM
Updated : 1 Oct 2016, 02:11 PM

শনিবার দুপুরে নগরীর উত্তর কাট্টলী মোস্তফা-হাকিম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে ‘প্রবীণ সমাজসেবক ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ- গণসংবর্ধনা’র আয়োজন করা হয়।

আয়োজক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি হলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব মহিউদ্দিনের রাজনৈতিক শিষ্য এবং সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম।

শনিবারের অনুষ্ঠানে দুজন মঞ্চে পাশাপাশি আসনে বসেছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালে দুজনকে অন্তরঙ্গ আলাপরত অবস্থায় দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানে মূলত স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ৪৪ জন প্রবীণকে সংবর্ধিত করা হয়। সংবর্ধিতদের হাতে দুই নেতা মিলে ক্রেস্ট তুলে দেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মনজুরকে ইঙ্গিত করে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, কেউ দলের পতাকাতলে আসতে চাইলে বাধা দেবেন না। যারা আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আসতে চায় তাদেরকে উৎসাহিত করবেন।

“বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের পক্ষে মনজুর আলম আজ যেভাবে গুণীজনদের সংবর্ধিত করেছেন, তা আগামী প্রজন্মের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন সাবেক মেয়র মনজুর আলম।

অনুষ্ঠানের পর মনজুর আলম উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন, “মহিউদ্দিন চৌধুরী আমার নেতা, চট্টগ্রামের নেতা। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিকল্প চট্টগ্রামে হবে না।

“উনি মেয়র থাকাকালে আমাকে বারবার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিয়েছেন। কাজ শিখেছি। তার কারণেই আমি মেয়র হয়েছি।”

সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে মনজুর আলমের হাত ধরেই মঞ্চ থেকে নামেন মহিউদ্দিন। এরপর রাজনৈতিক শিষ্য মনজুরের হাত ধরে হেঁটে সভাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে জানতে সন্ধ্যায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে মনজুর আলমের সাথে যোগাযোগ করতে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত ১৫ অগাস্ট ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের’ উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের পর থেকেই তার আওয়ামী লীগে ফেরা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন- মহিউদ্দিন চৌধুরী এখন মনজুরকে দলে ফেরাতে চান।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও মনজুর আলম ভোট গ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় ‘কারচুপির’ অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দেন তিনি।

নির্বাচনের দিন ৮০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করেন মনজুর।

ওই নির্বাচনে হাতি মার্কা নিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন বিরোধী হিসেবে পরিচিত আ জ ম নাছির উদ্দিন।

এদিকে সম্প্রতি ঘোষিত বিএনপির নতুন কমিটিতে আর ঠাঁই হয়নি মনজুরের। ২০১০ সালে বিএনপির সমর্থনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার পদ পান মনজুর।

সেবার নির্বাচনে নিজের রাজনৈতিক গুরু মহিউদ্দিনকে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানের পরাজিত করেন মনজুর আলম।

২০১০ সালের ১৮ জুলাই মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনই মনজুরের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করেন মহিউদ্দিন। তবে দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্কে তাতে চিড় ধরেনি। 

তারও আগে ১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৬ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সে সময় মনজুর ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

মনজুর আলমের বাবা আবদুল হাকিম কন্ট্রাক্টর ছিলেন পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যও ছিলেন।