এতে হালদা নদীর দূষণ বন্ধ করা না গেলে চট্টগ্রামও বিপন্ন হবে হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা এসেছে।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে ‘দূষণ হটাও, পরিবেশ বাঁচাও, হালদা বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে এই মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এতে হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদী শুধু কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নয়, এটি চট্টগ্রামবাসীর পানীয় জলের একমাত্র উৎস।
“নদী যেভাবে দূষিত হচ্ছে, তাতে এর পানি শোধন করেও আর নগরীতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তখন নগরবাসী চরম পানি সংকটে পড়বে। দূষণ বন্ধ না হলে বিপন্ন হয়ে পড়বে চট্টগ্রামও।”
চট্টগ্রাম ওয়াসার অধীনে পরিচালিত মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পে প্রতিদিন হালদা নদীর ৯০ মিলিয়ন লিটার পানি শোধন করা হয়। ওই পানিই চট্টগ্রাম নগরীতে সরবরাহ করা হয়।
মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, যেসব কারখানা হালদা দূষণের জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কোনো জোরালো পদক্ষেপ কখনোই নেওয়া হয়নি। লোক দেখানো জরিমানাতেই শেষ তোড়জোড়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে কার্প জাতীয় মাছের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী দূষণের কারণে এখন মৃতপ্রায় বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মু. সিকান্দার খান।
তিনি বলেন, “বিশ্বে যেসব প্রাকৃতিক প্রাচুর্য্যের কারণে বাংলাদেশ পরিচিত তার মধ্যে অন্যতম হালদা নদী। দূষণের কারণে এখন নদীটি মৃতপ্রায়। এর আশেপাশের লোকালয় দূষণে বিপর্যস্ত। হালদাকে বাঁচানো না গেলে বিপন্ন হবে চট্টগ্রামে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবন।”
হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের অধ্যাপক পরিবেশবিদ ইদ্রিস আলী বলেন, হালদার মত সম্পদশালী নদী বিশ্বে বিরল। কিন্তু অবহেলা, অযত্নে আর সর্বগ্রাসী মনোভাবের কারণে আমরা হালদাকে হারাতে বসেছি।
“দূষণের কারণে হালদা তীরের মানুষের জীবন বিপন্ন। জনপদ শূন্য করে কার লাভ? নদী ধ্বংস করে কে মুনাফা করতে চায়? হালদা না বাঁচলে চট্টগ্রামও মুমূর্ষ হয়ে যাবে।”
সচেতন নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, “আমরা হালদা পাড়ের মানুষ। নদীকে কিভাবে তিলে তিলে মারা হচ্ছে তা আমরা জানি।
“হালদা বিপন্ন হলে নগরবাসীও বিপদে পড়বে। চট্টগ্রামের এই অনন্য ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
হালদার ভাঙন প্রতিরোধ, মা মাছ রক্ষা, রাবার ড্যাম ও প্যারালাল খাল নির্মাণ বন্ধ, উজানের পানি প্রত্যাহার বন্ধ ও উজানে তামাক চাষ নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয় মানববন্ধন চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয় হালদা রক্ষা কমিটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, হাটহাজারী ফেডারেশন, রেসকোর্স, হালদা ডিম সংগ্রহকারী সমিতি, আহমদিয়া পাড়া জনকল্যাণ সংস্থা, রাউজান কবি নজরুল সাহিত্য পরিষদ, অতীশ দীপঙ্কর সোসাইটি ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন।
প্রায় দুই বছর ধরে নগরীর বায়েজিদ থেকে কুলগাঁও পর্যন্ত এলাকার শিল্প কারখানা এবং আবাসিক বর্জ্য দুই ইউনিয়নের সাতটি খাল বেয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়।
এর মধ্যে অধিকাংশ খালের গন্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদী।
দূষণের শিকার খালগুলো হল- শিকারপুর ইউনিয়নের কুয়াইশ, বাথুয়া, হামিদিয়া ও কৃষ্ণখালি এবং মাদার্শা ইউনিয়নের খন্দকিয়া, কাটাখালি ও মাদারি।
দূষণের কারণে অনাবাদি হয়ে পড়ছে উত্তর মার্দাশা. দক্ষিণ মার্দাশা, চিকনদণ্ডি, শিকারপুর ও বুড়িশ্চয় ইউনিয়নসহ আশেপাশের গ্রামের চাষের জমি।