জাসদের দলত্যাগীদের শিরিনের ‘একহাত’

নতুন ‘বিপ্লবী পার্টি’ গড়ার নামে দল ছেড়ে যাওয়া নেতাদের সমালোচনা করে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেছেন, ভাঙ্গনে তাদের কোনো শক্তিক্ষয় হয়নি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2016, 02:06 PM
Updated : 19 August 2016, 02:06 PM

শুক্রবার চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে জাসদের প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য। রাখেন তিনি।

শিরিন আক্তার বলেন, “কেন এই মঈনুদ্দিন খান বাদল ৮০ সালে জাসদ ছেড়ে গেল? তারা বলল বিপ্লবী পার্টি করতে হবে। এই মঈনুদ্দিন খান বাদল, খালেকুজ্জামান, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর জলিল জাসদ ছেড়ে গেল বিপ্লবী পার্টি করতে। তাদের বিপ্লবী পার্টি এখন কোথায়?”

মঈনুদ্দিন খান বাদলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “উনি তো জাসদ ছেড়েই দিয়েছিলেন। জাসদ ছেড়ে বাসদ করলেন, ওই বাসদ ছেড়ে আরেকটা বাসদ করলেন। আবার জাসদে ফিরলেন।

“তা আবার কেন জাসদে। কী মধু ছিল জাসদে? সেই জাসদ ছেড়ে দিয়ে এখন আবার নতুন গান গাইছেন। কারণটা কী? উদ্দেশ্যটা কী মঈনুদ্দিন খান বাদলের?

রাজনৈতিক দল হিসেবে ১৯৭২ সালে আত্মপ্রকাশের পর ভাঙাগড়ার মধ্যহ দিয়ে চলছে জাসদ।

জিয়ার শাসনামলে জাসদ দুইবার ভাঙে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল বেরিয়ে আলাদা জাসদ গঠন করেন। এরপর বেরিয়ে গিয়ে বাসদ গঠন করেন খালেকুজ্জামান ও আ ফ ম মাহবুবুল হক। সেই বাসদ এখন খণ্ড খণ্ড হয়ে টিকে আছে।

আশির দশকে এরশাদের সময়ে জাসদ আবার ভাঙে। এক সময়ের ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রব ও শাহজাহান সিরাজ আলাদা আলাদা জাসদ গঠন করেন।

রব সামরিক শাসক এরশাদের রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে ১৯৮৮ সালের সব দলের বর্জন করা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা হন। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় এলে শাহজাহান সিরাজ বিএনপিতে যোগ দেন।

শিরিন আক্তার

সম্প্রতি জাতীয় কাউন্সিলে সংসদ সদস্য শিরিন আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক করার বিরোধিতা করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ থেকে বেরিয়ে আলাদা কমিটি ঘোষণা করে দলটির একটি অংশ।

এই কমিটিতে শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে সভাপতি ও সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধানকে করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক। আর সংসদ সদস্য মাইনুদ্দিন খান বাদলকে করা হয়েছে কার্যকরী কমিটির সভাপতি।

এ প্রসঙ্গে শিরিন বলেন, “হঠাৎ করেই ‘আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র করতে হবে’, ‘সমাজতন্ত্র বলে কোনো কথা নেই’- এমন ঘোষণা দিয়ে শরীফ নুরুল আম্বিয়ারা জাসদ ছাড়লেন।

“কই এখন তো আবার সমাজতন্ত্র ছাড়ে না। দল ভেঙে চলে গেল। এখন তো সমাজতন্ত্রের কথাই বলে। বলেছে- ১৪ দলে থাকা যাবে না। বিরোধী দলে যেতে হবে। কই এখন তো ১৪ দল ছাড়ে না। তাহলে উদ্দেশ্যটা কী?”

সারাবিশ্বের জনগণের মধ্যে  সমাজতন্ত্র এখন আগের চেয়েও জনপ্রিয় মন্তব্যা করেন তিনি।

১৪ দলীয় জোটে থাকার পাশাপাশি নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার উপর গুরুত্বারোপ করেন শিরিন।

“জাসদ একটি রাজনৈতিক সংগঠন। এর প্রত্যেকটি সহযোগী সংগঠন সমভাবে বেড়ে উঠতে হবে। সে কারণে সকল সংগঠনকে ঠিকভাবে এগিয়ে নিতে হবে।”

‘সাম্প্রতিক ভাঙ্গনে দলের শক্তিক্ষয় হবে না’ জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকের কাছে মনে হয়- আম্বিয়া ভাই আর মঈনুদ্দিন খান বাদলের মত একজন পার্লামেন্টরিয়ান চলে গেল, নাজমুল হক প্রধান চলে গেল, এই দলের আর থাকল কী? কী থাকল- আমরা নিজেরা তো বুঝি।

“যারা কখনোই দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না তাদেরকে দিয়ে তারা রংপুর জাসদ কমিটি করেছে। ফলে আমাদের ভয় করার, চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই।”

মঈনুদ্দিন খান বাদলের কারণে চট্টগ্রামের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা এতদিন সংগঠনে বঞ্চনার শিকার হয়েছে বলেও দাবি করেন শিরিন আক্তার।

প্রতিনিধি সভায় অন্যণদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নঈমুল আহসান জুয়েন ও সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল।