আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা

সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সোয়া তিনশ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2016, 05:05 AM
Updated : 17 July 2016, 07:52 AM

আসলামের স্ত্রী, তার দুই ভাই এবং ব্যাংকটির সাবেক দুই কর্মকর্তা এই মামলায় বাকি পাঁচ আসামি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মানিকলাল দাশ বাদী হয়ে শনিবার গভীর রাতে ডবলমুরিং থানায় মামলাটি করেন বলে উপসহকারী পরিচালক সাধন সূত্রধর জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এর মধ্যেই মামলার অন্যতম আসামি আসলামের ভাই ও তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান রাইজিং স্টিল লিমিটেডের পরিচালক জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

দুদকের চট্টগ্রামের পরিচালক আবদুল আজিজ ভুইয়া বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে এবি ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৩২৫ কোটি ৭৫ টাকার ঋণ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।”

মামলার অপর আসামিরা হলেন- আসলামের আরেক ভাই রাইজিং স্টিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন চৌধুরী, আসলামের স্ত্রী ও চেয়ারম্যান জামিলা নাজনীন মাওলা, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম, হিসাব ও অডিট) ও এবি ব্যাংকের সাবেক উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি, হেড অব ক্রেডিট) বদরুল হক খান ও এবি ব্যাংকের সাবেক এমডি এম ফজলুর রহমান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসলাম চৌধুরীর পারিবারিক মালিকানাধীন রাইজিং স্টিল লিমিটেড পুরাতন জাহাজ ক্রয়ের জন্য ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনটি ঋণপত্রের (এলাসি) বিপরীতে এবি ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৩২৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ৯৫৫ টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি।

রাইজিং স্টার লিমিটেড ওই শাখায় প্রথম এলসি খোলে ২০০৮ সালে। দুই বছর পর প্রতিষ্ঠানটি ৪০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা দামে পুরনো জাহাজ আমদানি করে তা বিক্রি করলেও ব্যাংকের ঋণ পুরোটা পরিশোধ করেনি। 

প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংক ২০ কোটি ৮২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা পাওনা থাকার পরেও ২০১১ সালে আরও একটি এলসির মাধ্যমে একটি জাহাজ আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। এই এলসির বিপরীতেও প্রতিষ্ঠানটি ২৬ কোটি ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ করেনি।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে ১৬৫ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার ৬০০ টাকা ও ২০১৩ সালে ১৩৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৬ হাজার টাকার দুটি এলসির বিপরীতে আরও দুটি জাহাজ আমদানি করে তা বাজারে বিক্রি করলেও কোনো টাকা পরিশোধ করেনি।

বিপুল পরিমাণ ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ১৭ কোটি ৪০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তির দুটি দলিল ও তিনটি চেক জামানত হিসেবে দেয়। জামিনদার ছিলেন আসলাম চৌধুরী নিজেই।

আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় দণ্ডিবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলাটি করা হয়।

ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পাটির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে একটি ছবি গণমাধ্যমে আসার পর তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত ১৫ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন আসলাম, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের মামলা করা হয়।

কিছুদিন আগে বিএনপিতে যুগ্ম মহাসচিবের পদ পাওয়া আসলামকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া তিনটি নাশকতার মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

সর্বশেষ এই বিএনপি নেতাকে চেক প্রতারণার আটটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের একটি আদালত।