সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আরও দাবি করেন, গত ২২ জুন সকালেই নগরীর বন্দর থানা এলাকার এক পরিচিত ব্যক্তির বাসা থেকে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছাকে আটক করে পুলিশ। তারপর থেকে তার সন্ধান নেই।
মুছাকে আটকের সময় পুলিশের সঙ্গে তার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাকু ছিল বলেও দাবি করেন পান্না আক্তার। পুলিশ সাকুকে গ্রেপ্তারের খবর স্বীকারও করেছে।
গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শুরুতে জঙ্গিদের দায়ী মনে করলেও তদন্তকারীরা এখন বলছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পেশাদার অপরাধী।
মিতু হত্যায় জড়িত সন্দেহে যে পাঁচজনের ওপর দেশ ছাড়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ তাদের মধ্যে মুছাও আছেন। অপর চারজন হলেন নুরুল ইসলাম ওরফে রাশেদ, নবী, শাহজাহান ও কালু।
হত্যাকাণ্ডে ‘সরাসরি অংশ নেওয়া’ মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার, ‘অস্ত্র সরবারহকারী’ এহেতেশামুল হক ওরফে ভোলা, ‘মোটরসাইকেল সরবরাহকারী’ মুছার ভাই সাকু, শাহজাহান ও মনির নামে ছয়জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে খবর জানিয়েছে পুলিশ।
মুছাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি এবং তাকে খোঁজ করার কথা জানিয়ে মুছাসহ পলাতক অন্যদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিমান ও স্থল বন্দরে বার্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার।
সংবাদ সম্মেলনে পান্না আক্তার অভিযোগ করেন, বন্দর থানা এলাকায় পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তির বাসায় থাকা অবস্থায় ২২ জুন সকাল ৭টায় পুলিশ তাকে নজরবন্দি করে। সকাল ৯টার দিকে তাকে নিয়ে যায় পুলিশ।
বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম ও পরিদর্শক নেজাম উদ্দিন মুছাকে আটকে নেতৃত্ব দেন বলেও দাবি করেন পান্না আক্তার।
তিনি বলেন, পুলিশের কথোপোকথনে মহিউদ্দিন সেলিম এবং গ্রেপ্তার ওয়াসিম ও আনোয়ারকে আদালতে নেওয়ার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর নেজাম উদ্দিনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছেন।
তবে মুছাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন সেলিম ও নেজাম উদ্দিন।
মামলার তদন্তে সম্পৃক্ত নন দাবি করে ওসি মহিউদ্দিন বলেন, “আমি মামলার আইও নই। আমি কেন মুছাকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে যাব?”
অভিযোগ অস্বীকার করে নেজাম বলেন, “আমার পোস্টিং বিমান বন্দরে। অভিযানে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
তিনি বলেন, মুছাকে আটকের সময় পুলিশের সঙ্গে তার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাকুও ছিল।
গত শুক্রবার ভোরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে মুছার ভাই সাকু ও হত্যাকাণ্ডে ‘সরাসরি অংশ নেওয়া’ শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের খবর জানায় পুলিশ।
পান্না আক্তার বলেন, “আমার স্বামীকে আটকের পর থেকে কোনো খবরা-খবর পাচ্ছি না। সরকারের কাছে দাবি, আমার স্বামীকে জীবিত চাই। তাকে আদালতে হাজির করা হোক, কোনো দোষ করলে তার বিচার হোক।”
পান্নার দাবি, ৫ জুন মিতু হত্যাকাণ্ডের সকালে মুছা বাসায় ছিলেন।
ওয়াসিম ও আনোয়ার হত্যায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে গত ২৬ জুন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, মুছা হত্যাকাণ্ডের ‘পরিকল্পনাকারী’। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন তারা মুছার বাসায় ছিলেন।
তবে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি অস্বীকার করে তার স্ত্রী বলেন, “আমরা ফ্যামিলি বাসায় থাকি। তিন রুমের বাসার এক রুমে দুই ছেলে, এক রুমে আমরা এবং একসাথে ড্রইং ও ডাইনিং রুম। সেখানে বাইরের কোনো লোক গিয়ে থাকার অবস্থা নেই।”
মুছা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত জানিয়ে পান্না বলেন, “আমার স্বামীর একটাই দোষ তিনি বিএনপি করেন।”
তিনি বলেন, মুছা আগে গাছের ব্যবসা করলেও এখন বালুর ব্যবসায় সম্পৃক্ত। তিনি ২০০২ সালে সৌদি আরব থেকে ফেরেন; ২০০৩ সাল থেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করছিলেন।
কোন পুলিশ কর্মকর্তার সোর্স হিসেবে মুছা কাজ করতেন- জানতে চাইলে তার স্ত্রী পান্না বলেন, “বিএনপি সরকারের আমলেও মুছা সোর্স হিসেবে কাজ করত, বর্তমান সরকারের আমলেও করে।”
সংবাদ সম্মেলনে পান্না আক্তারের সঙ্গে তার দুই সন্তান এবং বাবা ফারুক শিকদার উপস্থিত ছিলেন।