‘বিরাগভাজন’ হওয়ার শঙ্কাই সত্য হল!

পদোন্নতি নিয়ে কর্মস্থল ছাড়লেও আবারও চট্টগ্রামে ফেরার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত মাহমুদা আক্তার মিতুর স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2016, 02:49 PM
Updated : 6 June 2016, 03:17 AM

৩০ মে ফেইসবুকে আবেগ উছলে পড়া এক লেখায় তিনি বলেছিলেন চট্টগ্রামের প্রতি তার টানের কথা।

ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় তিনি ঠিকই ফিরলেন; তবে এবারের ফেরা স্ত্রীর মুখটি শেষবারের মতো দেখার প্রয়াসে।   

রোববার সকাল ৭টার দিকে নিজ বাসার অদূরে নগরীর জিইসি মোড়ে ও আর নিজাম রোডে মোটর সাইকেল আরোহী হামলাকারীদের গুলিতে নিহত হন মাহমুদা।

এসময় মাহমুদার সঙ্গে ছিল তার প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির।

গত এপ্রিলে পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া বাবুল আক্তার গত বৃহস্পতিবার ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেন।

পদোন্নতির আগে বাবুল আক্তার গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উত্তর-দক্ষিণ জোনের দায়িত্বে ছিলেন।

পদোন্নতি পেয়ে নতুন কর্মস্থল ঢাকায় যাওয়ার আগে তাকে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে অনানুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়।

নিজের দীর্ঘদিনের কর্মস্থল চট্টগ্রামের গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবেও বিদায় নেন বাবুল আক্তার।

ও আর নিজাম রোডের একটি ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে ছেলে আকতার মাহমুদ মাহির ও মেয়ে তাবাসসুম তাজনীনকে নিয়ে থাকতেন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা।

প্রায় আট বছরের কর্মস্থল চট্টগ্রাম ছাড়ার আগে ৩০ মে রাত ১১টা ৯ মিনিটে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন পুলিশ ‍সুপার বাবুল আক্তার।

এতে তিনি লেখেন, “.. চট্টগ্রাম অঞ্চলেই চাকরি করাকালীন সময়ে আমার দুটি সন্তানের জন্ম হয়েছে। এখানে থেকেই পদোন্নতি পেয়েছি।”

“কাজ করতে গিয়ে সহযোগিতা পেয়েছি সহকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও সাধারণ মানুষের। তাদের সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ। চেষ্টা করেছি সর্বদা সততা ও ন্যায়ের সাথে কাজ করতে, সত্যের পক্ষে থাকতে। তবে পুলিশের চাকরিতে সকলকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। হয় অভিযোগপত্র না হয় চূড়ান্ত রিপোর্ট। এর মাঝামাঝি কোনে অবস্থানের সুযোগ নেই। সে কারণে অনেকের বিরাগভাজন হয়ে থাকতে পারি।”

স্ট্যাটাসে ‘বিরাগভাজন’ হওয়ার যে আশঙ্কা প্রকাশে করেছিলেন বাবুল আক্তার সেটিই যেন ‘সত্যে’ পরিণত হল তিন দিনের মাথায়।

চট্টগ্রামে জেএমবিসহ জঙ্গি দমনে একাধিক সফল অভিযানে নেতৃত্ব দেন এই সফল পুলিশ কর্মকর্তা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলছেন জঙ্গিরাই খুন করেছে মাহমুদা আক্তার মিতুকে।

স্ত্রীর হত্যার পর রোববার সকালেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফেরেন বাবুল আক্তার।

চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার আগে শেষ স্ট্যাটাসেও চট্টগ্রামে ফেরার কথা বলেছিলেন বাবুল।

তিনি লেখেন- সিএমপি থেকে বিদায় নিচ্ছি। জনস্বার্থে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে সংযুক্ত হবার আদেশ হয়েছে। যেখানেই থাকি মিস করবো প্রিয় চট্টগ্রামকে। মিস করবো চট্টগ্রামের মানুষদের, যাদের ভালোবাসা আমার কর্মজীবনের প্রেরণা। আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই চট্টগ্রাম।

বাবুলের জীবনের সবচেয়ে বেদনার ঘটনার সাক্ষীও হয়ে রইল তার ‘প্রিয়’ চট্টগ্রাম।