নতুন রূপে সাজছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

আকর্ষণ বাড়াতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকে নতুন রূপে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে চিড়িয়াখানার বিভিন্ন অংশের সংস্কার কাজ।  

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2016, 03:58 AM
Updated : 4 June 2016, 03:58 AM

পুরো সংস্কার শেষ হলে চিড়িয়াখানায় বাঘসহ আরও নতুন কিছু প্রাণি আনা হবে বলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন। 

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে রংপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি কয়েকটি প্রাণী বিনিময়ের জন্য।

“আমি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি সেখান থেকে রেয়ার (বিরল) কিছু প্রাণী আনার ব্যাপারে।”

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সংস্কার কাজ শেষ হলে এটি অন্যরকম রূপ লাভ করবে বলেও মনে করেন জেলা প্রশাসক। সংস্কার কাজ শেষ হলে এখানে আরও প্রাণী আনা হবে বলে জানান তিনি।

এর অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বাঘ আনার প্রক্রিয়াও হচ্ছে বলে জানান মেজবাহ উদ্দিন।

চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন জানান, জেলা প্রশাসন ও চিড়িয়াখানার নিজস্ব অর্থায়নে ৮০ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে।

চিড়িয়াখানার নতুন ফটক নির্মাণের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে সীমানা প্রাচীর। আগামী জুন মাসের মধ্যে এই উন্নয়ন কাজ শেষ হবে বলেও আশা তার।

সরেজমিনে চিড়িয়াখানায় দেখা গেছে, এটির পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুরু হয়েছে দক্ষিণ পাশের নির্মাণ কাজ। বড় গাছগুলোর চারপাশে তৈরি করা হচ্ছে বসার স্থান। যেখানে বিভিন্ন ধরনের চিত্রাঙ্কণও হচ্ছে।

চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, সীমানা প্রাচীরসহ অবকাঠামো গত উন্নয়নের পাশাপাশি তৈরি করা হবে আধুনিক হাসপাতাল ও কোয়ারানটাইন রুম।

এছাড়াও চিড়িয়াখানার পশ্চিম পাশে বড় খাঁচাগুলোর জন্য গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজ ও খাঁচা সংস্কারের কাজও চলছে বলে জানান তিনি।

এতে সংগ্রহ করা নতুন প্রাণী রাখতেও সুবিধা হবে উল্লেখ করে মোর্শেদ বলেন, রংপুর চিড়িয়াখানার সঙ্গে সিংহী ও কুমিরের পরিবর্তে সিংহ ও ঘড়িয়াল আনার প্রক্রিয়া চলছে।

নতুন করে আকর্ষণীয় একটি ফটক নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের চিড়িয়াখানার প্রতি আকর্ষণ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মোর্শেদ বলেন, চিড়িয়াখানার পশ্চিম পাশের আগে সীমানা প্রাচীর না থাকায় অনেকটা অরক্ষিত ছিল। স্থানীয় লোকজন অবাধে চিড়িয়াখানায় অনুপ্রবেশ করত এবং অনেক দর্শনার্থীর কাছ থেকে মোবাইল টাকা-পয়সা ছিনতাই হতো বলেও অভিযোগ পাওয়া যেত।

“সীমানা প্রাচীর তৈরি হওয়ায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়েছে।”

১৯৮৯ সালে ফয়’স লেক এলাকায় ছয় একর জায়গা নিয়ে নির্মিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আনা প্রাণীগুলোর খাপ খাওয়াতে কোনো কোয়ারানটাইন রুম বা হাসপাতাল ছিল না।

চিড়িয়াখানার চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, “একটি প্রাণী একস্থান থেকে অন্যস্থানে আনার পর সেখানে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি খুবই দরকার।

“নতুন কোয়ারানটাইন রুম করা হলে বাইরে থাকা আনা প্রাণীগুলো সেখানে আলাদা করে রেখে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।”

চিকিৎসক শুভ বলেন, আগে প্রাণীগুলো অসুস্থ হলে সেগুলোকে চিকিতসা দিয়ে আবার খাঁচায় রেখে আসা হতো হাসপাতাল নির্মাণের ফলে প্রাণীগুলো হাসপাতালে রেখে পরিপূর্ণ চিকিতসা সেবা দেয়া যাবে।

চিড়িয়াখানার এসব সংস্কার হওয়ার কারণে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়বে বলে মনে করেন  ডেপুটি কিউরেটর মোর্শেদ।

“প্রতিদিন চিড়িয়াখানায় গড়ে এক থেকে দেড় হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করে, যা ঈদের ছুটি ও ডিসেম্বর মাসে আরও বাড়ে।”

তিনি জানান, গত বছর চিড়িয়াখানায় প্রায় ছয় লাখ ৬৫ হাজার দশনার্থী প্রবেশ করেছে। যেখান থেকে টিকেট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

‍টিকেট বিক্রির টাকা থেকে ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয় বলে জানান তিনি।

মোর্শেদ বলেন, গত ১০ মে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখান পরিদর্শনে এসে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ২ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন।

এই অর্থ পাওয়া গেলে চিড়িয়াখানার উত্তর পূর্ব দিকে পাহাড়ে ও তার আশে পাশের এলাকায় পাখির এভিয়ারি তৈরি করারও কথা জানান তিনি। 

অর্থ প্রতিমন্ত্রী মান্নান ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক থাকার সময় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা তৈরি করা হয়।

জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “অর্থ প্রতিমন্ত্রী পরিদর্শনে এসে পাখির এভিয়ারি করার জন্য ‘প্রকল্প প্রস্তাব’ দিতে বলেছেন। এই অর্থ পাওয়া গেলে এভিয়ারি করার কাজও শুরু হবে।”